আদালতের ডকে থাকা ২ ব্যক্তিকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার :

 

মৌলভীবাজার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চলমান থাকাবস্থায় আদালত কক্ষে উপস্থিত বিজ্ঞ বিচারক, বিজ্ঞ আইনজীবিগনের সম্মুখে দরজায় লাথি মারাসহ আদালতের ডকে থাকা ২জন ব্যক্তিকে জোরপূর্বক ছিনাইয়া নিয়া আদালতকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাষায় কথাবার্তা বলা ও অসৌজন্য মূলক আচরনসহ বিভিন্ন অপরাধে মৌলভীবাজার আইনজীবি সহকারী রণজিত কুমার নাগ (৪২) যশোবস্ত ভট্রাচার্য (৩২), রাখু কান্তি নাগ (২৭), সজল চন্দ্র দাস (৩৯), মো: আমির খসরু (৪৩), মো: অলিউর  রহমান খালেদ (৩৮)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫/৬জনকে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের (মামলা নং- ১২/২৫৬, তারিখ : ১২/০৯/২০২৪ইং, জিআর মামলা নং-২৫৬,) করেছেন অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-এর বেঞ্চ সহকারী বিকাশ চন্দ্র দত্ত।

 

অপরদিকে, এ ঘটনায় আইনজীবী সহকারী রনজিত কুমার নাগ- এর আইনজীবি সহকারী সনদ সাময়িক ভাবে বাতিল করা হয়। এবং কেন আজীবনের জন্য সনদ (আইনজীবি সহকারী- কার্ড নং-৮৫) বাতিল করা হবে না তন্মর্মে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড, মো:জয়নুল হক স্বাক্ষরিত প্যাডে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবি সহকারী রণজিত কুমার নাগ-কে আদালত প্রাঙ্গনে কোন মামলা পরিচালনায় সহযোগীতা করিতে বারিত করা হয়। এবং বর্নিত ঘটনার সহিত অন্য কোন আইনজীবি সহকারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্বান্ত গ্রহন করা হয়।

 

মামলা ও আদালত সুত্রে জানা যায়-গত ১০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচার কার্য শুরু হওয়ার পর এজলাশের সম্মুখে কার্ডধারী ও কার্ডবিহীন আইনজীবী সহকারীগণসহ বিচার প্রার্থী ও তাদের সাথে আসা লোকজন এজলাশ কক্ষের পশ্চিম দিকে দরজার সম্মুখে জটলা পাকিয়ে দাঁড়ানোয় আদালত কক্ষে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা বিজ্ঞ আইনজীবীগণসহ বিচারাধীন মামলায় ডাক পড়া বিচার প্রার্থীদের এজলাশ কক্ষে প্রবেশে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় আদালতের আসীন বিজ্ঞ বিচারকের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি মাইক্রোফোনে একাধিকবার মৌখিকভাবে দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন এবং তদনুযায়ী আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোর্ট পুলিশ সদস্য কনস্টেবল সুব্রত সিংহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের একাধিকবার সরিয়ে দেন। এতদসত্ত্বেও তারা আবারও দরজার সম্মুখে এসে জটলা পাকানোয় আনুমানিক সকাল ১১.৪৫ ঘটিকার দিকে ডাককৃত মামলার সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবী ও পক্ষগণ উক্ত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে এজলাশে ঢুকতে না পারায় বিজ্ঞ বিচারক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের মধ্যে আইনজীবী সহকারী ২নং আসামি যশোবন্ত ভট্টাচার্য্য ও বিচারপ্রার্থীর সাথে আসা একজন লোককে ডেকে তাদের নাম পরিচয় জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এবং বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও দরজার সম্মুখ ভাগ হতে না সরার কারণ জানতে চাইলে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় দরজার সম্মুখের জটলা দূর করার লক্ষ্যে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে সাময়িকভাবে এজলাশ কক্ষের আসামির ডকে আটকে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ণিত পুলিশকে মৌখিক নির্দেশ প্রদান করেন।

 

পরবর্তীতে আইনজীবী সহকারী যশোবন্ত ভট্টাচার্যের পক্ষে কতেক বিজ্ঞ আইনজীবী ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক বিজ্ঞ আদালতকে উক্ত আসামিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রকাশ্য আদালতে মৌখিকভাবে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছুক্ষণ পর আটককৃত উভয় ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। স্বাভাবিক বিচার কার্য চলাকালেই আকস্মিকভাবে আইনজীবী সহকারী রণজিত কুমার নাগের নেতৃত্বে বেআইনী জনতাবদ্ধে শক্তির মহড়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক ত্রাস সৃষ্টি করে অবৈধভাবে এজলাশ কক্ষে অনুপ্রবেশ করে বিজ্ঞ বিচারকের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে উচ্চস্বরে অপমানসূচক বক্তব্য প্রদান করতে থাকে। তখন আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বর্ণিত পুলিশ তাদেরকে বের করে দিতে চাইলে তার সরকারী কাজে স্বেচ্ছাকৃতভাবে বাধা দিয়ে আইনজীবি সহকারী রণজিত কুমার নাগ হাত উঁচিয়ে চরম হট্টগোল সৃষ্টি করে তার দাপট প্রদর্শন করতে থাকে এবং তার দেখাদেখি সকল আসামি একযোগে অকথ্য ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে বিশৃংখল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আটকাবস্থা হতে বেআইনীভাবে এজলাশের দরজার বাইরে নিয়ে চলে যায়। সঙ্ঘবদ্ধরা এজলাশ কক্ষের দরজায় সজোরে থাবা, ধাক্কা ও লাথি মারা শুরু করে এবং দরজা ভেঙ্গে আদালতের এজলাশ কক্ষে পুনরায় জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়। এবং আদালতের বিচার কর্মকান্ডে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় আদালতে আসীন বিজ্ঞ বিচারক সাময়িক সময়ের জন্য তার আসন ত্যাগ করেন। এরপর আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে মিছিল সহকারে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ ও বিজ্ঞ বিচারকগণের বিরুদ্ধে উচ্চস্বরে শ্লোগান দিয়ে দিয়ে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে আদালত ভবন ত্যাগ করে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *