বগুড়া ডাকঘরের গেট বন্ধ করে মুজিব মঞ্চ নামের বিষফোঁড়াটি এখন মুক্ত মঞ্চ

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

বগুড়া প্রতিনিধিঃ

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হঠাৎ পোষ্ট অফিসের মূল ফটক বন্ধ করে রাতারাতি তৈরি করা হয় মুজিব মঞ্চ নামের এই বিষফোঁড়া। জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১৯ লক্ষ টাকা ব্যায় করে ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর দুপুরে এটির উদ্বোধন করা হয়েছিল (তৈরিতেও ছিল চরম অনিয়ম ও দুর্নিতি)। ওই সময় বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের কানাকানি ও সমালোচনা হলেও এসবে কোনই গুরুত্ব ছিলনা প্রশাসনের।

আওয়ামী লীগও এসবে কোনই পাত্তা দেয়নি বরং এসব বিষয়ে কেউ কথা বললে তাদেরকে হেনস্তা করা হতো নানাভাবে। মঞ্চটি তৈরি হওয়ার আগে এই স্থানে বিভিন্ন সময় খন্ডকালীন নাটক, সঙ্গিতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ছোট ছোট অনুষ্ঠান হলেও মঞ্চটি তৈরির পর প্রতিনিয়তই চলতে শুরু করে নানা ধরনের সমাবেশ, মিটিং, ডিজে পার্টিসহ নানা ধরনের উৎসবের কর্মকান্ড। কোন কোন সময় সকাল থেকে শুরু করে গভির রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে চলতো এসব কর্মযজ্ঞ। মঞ্চটি একেবারে শহরের কেন্দ্রবিন্দু অর্থাৎ শহরের সবথেকে জনসমাগম এলাকায়।

এছাড়া বগুড়া প্রধান ডাকঘরের সামনে, দক্ষিন পাশে রয়েছে জেলা স্কুল, সার্কিট হাউস, আদালত, পশ্চিম পাশে বগুড়া কলেজ। এছাড়া চারিপাশেই রয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের কার্যালয়। মঞ্চটি সরাতে অনেকেই প্রশাসনের সমিপে বিষয়টি বিভিন্নভাবে উপস্থিত করলেও কোনই সুরহা মেলেনি বরং হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। দিন শেষে ক্লাতি দূর করতে একটু আরাম নেয়ার এই স্থানটি দখল হয়ে যাওয়ায় নিরবে নিভৃতে হতাশা ও আক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই ছিলনা সাধারণ মানুষদের। যেখানে একটু আরামের জন্য আসতো মানুষ সেখানেই তৈরি হলো হুরহেঙ্গাম ও হট্টগোলের কেন্দ্র। জ্যাম নিরসনের জন্য নেয়া পোষ্ট অফিসের জায়গাখানি আবারো দখল হয়ে তৈরি হলো জ্যাম তৈরির কারখানা।

৫ই আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ছাত্র জনতা মঞ্চটির কিছুটা ভাংচুর করেছিল একই সাথে মঞ্চ সংলগ্ন শেখ মুজিবের ম্যুরালটিও ভাংচুর করা হয়। কিন্তু পরে এটিকে অপসারন করে মুজিব মঞ্চের নাম পরিবর্তণ করে মুক্ত মঞ্চ ও ম্যুরালটিতে মুজিবের ছবি উপড়ে ফেলে বগুড়ায় আন্দোলনে শহীদদের নামের একটি সাইনবোর্ড সাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনায় সচেতন মানুষগুলো, বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ, খেটে খাওয়া মানুষগুলোসহ মঞ্চ ও ম্যুরালের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের হতাশা রয়েই গেলো। তাদের দাবি সরকারি জায়গা দখল করে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ গেট বন্ধ করে অবৈধভাবে গড়েতোলা দুটি স্থাপনা এখনো কিভাবে থাকে। তাহলে কি আওয়ামী লীগের তৈরি এই অবৈধ্য স্থাপনা মেনে নিল প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো? যদি তাই না হয় তাহলে এখনো কেনো সরানো হচ্ছেনা এই বিষফোঁড়াটি।

মঞ্চের স্থানটি মুলত পোষ্ট অফিসের। এটির সামনের আরোও বেশকিছু জায়গা পোষ্ট অফিসের ছিল কিন্তু যানযট নিরসনে রাস্তার জায়গা সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে বেশকিছু জায়গা নিয়ে নেয়া হয়। তখন থেকেই পোষ্ট অফিসের জায়গার সংকির্ণতা শুরু হতে থাকে। এক পর্যায়ে মুজিব মঞ্জ তৈরির বায়না ধরে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার দাপটে বন্ধ করে দেয়া হয় মূল গেটটি, দখল করে নেয় পোষ্ট অফিসের জায়গা। এতেকরে ঢাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ নানা ধরনের দলিলাদি ও তথ্য নিয়ে আসা গাড়িগুলো এই গেট দিয়ে আর ঢুকতে পারেনা। বাধ্য হয়ে পেছনের গেট দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাতে শুরু করে। ওইসময় ক্ষমতাসীনরা মুজিব মঞ্চ করেই খান্ত হয়নি, মঞ্চের পেছনে অর্থাৎ পোষ্ট অফিসের মাঠের ভেতরে একটি বেদি তৈরিরও ফন্দি এটে বিভিন্নভাবে এটি বাস্তবায়ন করতেও চেষ্টা চালাতে শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে ডাক বিভাগের উর্ধতণ কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শক্রমে একটি নাইট পোষ্ট অফিস তৈরির পরিকল্পনা করেন বগুড়া ডাক বিভাগ। এক পর্যায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬ লক্ষ টাকার একটি বরাদ্বের মাধ্যমে মুজিব মঞ্চটির পেছনে নাইট পোষ্ট অফিসের ঘরটি স্থাপন করা হয়। এতে সুরক্ষিত হয় পোষ্ট অফিসের জায়গা। কিন্তু অসহ্য বিকট শব্দ থেকে রেহাই পায়নি এখানকার মানুষগুলো।

এ বিষয়ে বগুড়া পোষ্ট মাষ্টার আল আমিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মঞ্চটি হওয়ায় যে আমরা কতোটা ভোগান্তিতে রয়েছি তা বলে শেষ করা যাবেনা। বিভিন্ন সময় সারাদিন বিকট শব্দে দিন কাটাতে হয়। সেবা নিতে আসা মানুষগুলোও অতিষ্ঠ হয়ে পরে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন আমাদের অফিসের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রধাণ গেটটি বন্ধ করে এই মঞ্চটি স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় পোষ্ট অফিসের আরো জায়গা দখলের পায়তারা চলছিল। পরে উর্ধতণ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নাইট পোষ্ট অফিস স্থাপনের মধ্যে দিয়ে তা রোধ করা হয়েছে। আমরা চাই সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে এই মঞ্চটি অপসারণ করা দরকার।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এটি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাবলে করেছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এটি উচ্ছেদের পরিকল্পনা আমাদের আছে। তবে আমাদের সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, বাংলাদেশ কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন। আমরা আলটিমেটলি বর্তমানে মুক্ত মঞ্চ নামের মঞ্চটি কোন কোন সময় ব্যবহার করিছি কিন্তু এটি ঠিক নয় কারন আওয়ামী লীগের তৈরি মঞ্চ আমরা ব্যবহার করতে পারিনা। এই নেতা আরো বলেন এটি অপসারন করা হবে। আমাদের সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রশাসন চাইলে এটি যেকোন সময় অপসারন করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোছাঃ হোসনা আফরোজা বলেন পোষ্ট অফিসের জায়গা দখল ও মূল ফটক দখল করে মঞ্চ তৈরি করার হয়েছে। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম আমরা এটি গুরুত্বসহকারে দেখবো।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *