নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ ও চারপাশের সকল জলাধার যেমন- খাল, জলাশয় ইত্যাদির কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নগর জীবনের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা শহরে ব্লু নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, আরডিআরসি,বাপা, গ্রীন ভয়েস, WBBT, বাংলাদেশ পুলিয়,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অংশগ্রহণে খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ উপলক্ষ্যে রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর মিরপুরে ডিএনসিসির আওতাধীন বাউনিয়া খাল প্রান্তে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ৬টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এলাকার মোট ১৯টি খাল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ৬টি খাল সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে। ৬টি খালের মধ্যে রয়েছে ডিএনসিসি এলাকার ৪টি খাল: বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি এবং ডিএসসিসির এলাকার ২টি খাল: মান্ডা ও কালুনগর। খাল সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, খাল পরিষ্কার, পাড় সংরক্ষণসহ ব্লু নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঢাকার খালগুলোতে আমাদেরকে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র। খালের আশেপাশের বাসা বাড়ির বর্জ্যগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা বিহীত করতে হবে যাতে খালে কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। আর এজন্য স্থানীয়দেরকে দিয়ে আমরা একটা কমিটি করে দেব, দুই কিলোমিটার পর পর একটা কমিটি থাকবে, তারা এটি মনিটর করবে।’
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আশা করি আমরা এই বর্ষার আগে আপাতত ০৬ টা খাল দখল ও দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হব এবং খুব শীঘ্রই আমরা আরো ৪ টা খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ শুরু করব এবং এই বর্ষার আগে বাকি আরও ০৯টির কাজ শুরু হবে। অর্থাৎ এ বছরের মধ্যেই ১৯ টি খালের দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে খালের যে পাড়টা আছে ওই পাড়ে আমরা চাষাবাদ করতে পারি কিনা। আমরা চাচ্ছি খালের পাড়গুলোতে আমরা সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারি কিনা, আর খালের মধ্যে মাছ আনা যায় কিনা। সেটা আমরা কেমন করে ফিরিয়ে আনবো, কেমন করে আমরা খালের প্রাণ ফিরিয়ে দেব সেই চেষ্টাটা আমরা করবো।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক উদ্যোগ হলেও নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নগরবাসীকে তার খালগুলোকে রক্ষার দাবি তুলতে হবে এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে, অধিকারের জায়গা থেকে অধিকারের চর্চাও করতে হবে, দায়িত্বের জায়গা থেকে দায়িত্বও পালন করতে হবে আপনাদেরকে।’
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির আওতাধীন ৬টি খাল সংস্কার কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নাগরিকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘ঢাকা শহরকে যদি মানবদেহ কল্পনা করা হয়, তবে খালগুলো হচ্ছে শিরা-উপশিরা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে, এজন্য খালগুলোকে করতে হবে দূষণমুক্ত, খনন এবং সংস্কার।’
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। নগর সমস্যা সমাধানে ‘ঢাকা নর্থ মডেল পরিকল্পনা’ হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে কেন্দ্র করে গড়া এই পরিকল্পনা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য রোল মডেল হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরের অভ্যন্তরস্থ ও চারপাশের সকল জলাধার যেমন- খাল, জলাশয় ইত্যাদির কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নগর জীবনের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সাধনের উদ্যোগ ও রূপরেখা গ্রহণ করা হয়েছে। ব্লু নেটওয়ার্ক হচ্ছে এরূপ রূপরেখা যেখানে ঢাকার ১৯টি খালকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
ব্লু নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগ যেনো চলমান থাকে এবং খাল সংস্কার কার্যক্রমে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ কামনা করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
ডিএনসিসির প্রশাসক মো: মাহমুদুল হাসান এনডিসি স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা শহরে ব্লু নেটওয়ার্ক পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ডিএনসিসির আওতাধীন খালের দখল ও দূষণমুক্ত করতে আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ স্বদ্যবহার করবো, এই কাজে আমরা নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করে খালগুলোর সংস্কারের মাধ্যমে একটি পর্যায় নিয়ে যেতে পারবো। ঢাকা শহর ঐতিহ্যগতভাবে খাল, নদী, জলাভূমি বেষ্টিত একটি প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল ছিল। আমরা ক্রমান্বয়ে সেই ঐতিহ্য হারিয়েছি। অপরিকল্পিত নগরায়ন, আইন প্রয়োগে শৈথিল্য বিভিন্ন কারণে এই শহরের বাসযোগ্যতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এখান থেকে পুনরুদ্ধার করে আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়তে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএনসিসি সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ নিজাম উদ্দিন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হামিদুর রহমান খান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ), ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।