মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার :
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে হতে বিক্ষোভ মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুণরায় দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়। পরে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ডা. আব্দুশ শহীদ।
এনডিএফ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, শ্রীমঙ্গল স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, হোটেল শ্রমিক নেতা তারেশ চন্দ্র দাস, রিকশা শ্রমিকনেতা মোঃ জসিমউদ্দিন প্রমূখ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি, দফায় দফায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, ঔষুধপত্রসহ চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, বই, খাতা, কাগজসহ শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, শিক্ষা শেষে চাকরির অনিশ্চয়তা ইত্যাদির প্রভাবে যখন শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনগণের জীবন-জীবিকাকে ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর করে চলেছে তখন আইএমএফের ঋণচুক্তির শর্তপুরণে অন্তবর্তী সরকারের ভ্যাট দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি জনগণের উপর ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’ হয়ে এসেছে।
অন্তবর্তী সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী মার্কিনের দালাল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রতি বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার এবং ততোধিক ঋণগ্রস্থ করেছে। ঋণখেলাপি, তারল্য সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং সেক্টরে দেউলিয়াত্বের বিপদ, বিগত সরকারের ন্যায় টাকা ছাপানো ইত্যাদি কারণে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহতাকে সামনে আনছে। অন্তবর্তী সরকার মুখে অনেক কথা বললেও জনজীবনের সমস্যা সংকটের প্রেক্ষিতে ভূমিকা না নিয়ে পূর্বের ধারায় কার্যত প্রভূ সাম্রাজীবাদের নীতিনির্দেশ বাস্তাবায়ন করে চলেছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বাজার ও প্রভাববলয় পুনর্বন্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা¬-Ñপ্রতিদ্বন্দ্বিতা ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে মার্কিনের নেতৃত্বে ন্যাটোর সাথে রাশিয়া-চীনের আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ; মার্কিন ও পাশ্চাত্যের মদতপুষ্ঠ ইসরাইলের গাজা প্যালেস্টাইন, লেবানন, সিরিয়ায় আগ্রাসনের ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে মার্কিন-চীন যুদ্ধ উত্তেজনা বৃদ্ধি দক্ষিণ পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় তা সম্প্রসারণের বিপদ বৃদ্ধি করে চলেছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও সামগ্রিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে মার্কিনের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের এবং প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন-রাশিয়া বাংলাদেশকে স্ব স্ব পক্ষে যুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিনের দালাল বিগত স্বৈরাচারী সরকারের নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী ভারত নির্ভরতা ও প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্ক অগ্রসর করার প্রেক্ষিতে মার্কিন পরিকল্পনায় শহর কেন্দ্রিক ছাত্র-মধ্যবিত্তদের গণআন্দোলনে ও সেনাবাহিনীর ভূমিকায় ৫ আগষ্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী খুনী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। মার্কিন ও পাশ্চাত্যের অতি বিশ্বস্থ ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকারকে ক্ষমতায় আনা হয়। ক্ষমতার এই পট পরিবর্তনে একক পরাশক্তি মার্কিনের অবস্থান আরও অগ্রসর হয়, দালাল ভারতের অবস্থান দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রতিপক্ষ চীন-রাশিয়া স্বীয় অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট।
অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে মার্কিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক তৎপর। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশ চালাতে মার্কিন ও পাশ্চাত্যের উপযোগী সংবিধান করার লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার বিষয় সামনে এনে অগ্রসর হচ্ছে। প্রচলিত নয়াউপনিবেশিক ও আধাসামন্ততান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে কার্যকরী রেখে শ্রমিক-কৃষক-জনগণ দেশ জাতির কোন লাভ হবে না। এদেশের শাসন ক্ষমতায় এযাবত যারা অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা সকলেই কোন না কোন সাম্রাজ্যবাদের দালাল সরকার। তাই এক সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে আরেক সাম্রাজ্যবাদ নয়, এক দালালের পরিবর্তে আরেক দালাল নয়, সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তীব্রতর করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনগণ ও জাতীয় জীবনের জরুরী দাবি-দাওয়া নিয়ে দূর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।