শ্রীপুরে ছাত্রদল নেতা রিফাত মোড়ল এক আতঙ্কের নাম

মো: জহিরুল ইসলাম, গাজীপুরঃ

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার সিংগারদিঘী এলাকার বাসিন্দাদের রাতে ঘুম হারাম করে দিয়েছে ছাত্রদলের এক নেতা। প্রকাশ্যে কিংবা রাতে আধারে চালিয়ে যাচ্ছে জবর দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা সিংগারদিঘী এলাকার মোক্তারুল করিম শামীম মোড়লের ছেলে জিয়াউল করিম রিফাত মোড়ল (৩০)। সে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্র দলের আহবায়ক এবং গাজীপুর জেলা ছাত্র দলের যুগ্ম সম্পাদক।

সরেজমিনে স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর শ্রীপুর উপজেলা ছাত্র দলের আহবায়ক নিজ এলাকায় সিংগারদিঘীতে জবর দখল ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছেন। এমনকি বিএনপি অনেক নেতা কর্মীদের জমি ব্যাবসা তিনি দখল করেছেন। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

অভিযোগকারীদের একজন মোফাজ্জল হোসেন (৫০) তিনি শ্রীপুর থানায় রিফাত মোড়লসহ ১০জনের বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার পৈত্রিক জমি জবর দখল করার জন্য বহুদিন যাবৎ খুন জখমের হুমকি করতো জিয়াউল করিম রিফাত মোড়লসহ অন্যান্যরা। গত ৫ সেপ্টেম্বর সকাল সকালে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মোফাজ্জল হোসেনের জমি জবর দখল করার  জন্য লোহার রড, দা, সাবল, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে মোফাজ্জলে চাচাত ভাই লুৎফর রহমান (৪৫) জমিতে গেলে জবর দখলকারীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এসময় প্রতিবাদ করলে সাথে নিয়ে আসা অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এসময় লুৎফর রহমান আর্তচিৎকারে আশপাশ লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা হুমকি দেয় পুনরায় জমি যে কোন উপায়ে জবর দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করবে। এতে যদি বাধা প্রদান করা হয় তাহলে জমিতে খুন করে লাশ মাটিতে পুতে ফেলিবে কিংবা মামলা মোকদ্দমা দিয়া হয়রানীসহ জেল হাজত খাটাইবে।

আরো জানা যায়, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন যখন গাজীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন তখন রিফাত মোড়লের বাবা মোক্তারুল করিম শামীম মোড়লের সাথে গভির সখ্যতা। তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল হারুনে। হারুনের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল মোক্তারুল করিম শামীম মোড়ল। আর এখন বাবা ছেলে দুজনেই নেমেছেন দখল বাণিজ্যে।

ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাজী সালাম জানান, রিফাত মোড়ল নিজে উপস্থিত থেকে তার সাথে ১ থেকে দেড়’শ লোক নিয়ে সিংগারদিঘী এলাকার ফিসপার্ক প্রজেক্ট, নকুন কিটনাশক কারখানা, শিরিষগুড়ি গ্রামের আবু হানিফের কৃষি জমি দখলে হামালা চালায়। এসবের সাথে রিফাতের বাবা শামীম জড়িত। এছাড়া নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে অনেক বিএনপি নেতাদের ব্যবাসা দখলসহ মামলায় জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বাবা ছেলের বিরুদ্ধে। তারা বিভিন্ন ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চাঁদার জন্য হুমকী প্রদান করেছেন। এসব বিষয়ে সিংগারদিঘী এলাকার মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জিয়াউল করিম রিফাত মোড়ল বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। রাজনৈতিক ভাবে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার পূর্ব পুরুষ বিএনপি’ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। আমিও বিএনপি’র আদর্শে বিশ্বাসী। যারা রাজনৈতিক ভাবে অযোগ্য তারা এসব অভিযোগ আনছেন। আওয়ামী সরকারের আমলে একাধিক মামলা হয়েছে এলাকায় থাকতে পারিনি। এখন এলাকায় ফিরে আসাতে অনেকে শত্রুতা শুরু করেছে।

এবিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মিনহাজ সরকার বলেন, রিফাত মোড়লদের জবর দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনার আমরা শুনেছি। অনেকে মৌখিক অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তাদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে দলীয় ভাবেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকির বলেন, রিফাত মোড়ল এবং তার বাবা শামীম মোড়ল সন্ত্রাসী প্রকৃতি লোক। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। এবিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধিন আছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *