সাতক্ষীরায় অনুমোদনহীন ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় ২ প্রসূতির মৃত্যু  

আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা :

 

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটায় লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভূল চিকিৎসায় দুজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ধামা চাপা দিয়ে রাতেই ভুক্তভোগী দুই পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেছে পুলক পাল বলে এলাকায় গুজ্ঞন শোনা যাচ্ছে।

 

এছাড়া ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে  শনিবার সকাল থেকে  দশ লক্ষ টাকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে দৌঁড় ঝাপ করতে দেখা গেছে।

 

শুক্রবার রাতে পাটকেলঘাটার লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘটনাটি ঘটেছে। মৃত্যুর স্বীকার  খলিশখালী ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের  আব্দুস সালামের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন এবং গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বেগম।

 

সরোজমিনে গেলে ভুক্তভোগীর স্বামী গনেশপুর গ্রামের ফয়সাল হোসেন জানান, দুপুরে তার স্ত্রীকে লোকনাথ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।পরে রাতে তার স্ত্রীর  অবস্থার অবনতি হলে  সাতক্ষীরার হার্ট ফাউন্ডেশানে  নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

 

 

এদিকে আরেক ভুক্তভোগীর স্বামী এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল ছালাম জানান, তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার সকালে পাটকেলঘাটার লোকনাথ ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।ওখানে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সিজার করা হয়। রাত ১০টার দিকে তার স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশানে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎস্বাধীন অবস্থায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া স্ত্রীর দাফনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ক্লিনিকের সাবেক এক কর্মচারী জানান, পুলক পাল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে কম টাকায় চিকিৎসা করাবে  বলে তার ক্লিনিকে রোগী ভর্তি করান। পরে অপচিকিৎসার নামে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এছাড়া তার ক্লিনিকে অধিকাংশ  সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই ক্লিনিকের কিংকর নামে এক কর্মকর্তা। পরে অবস্থা বেগতিক হলে মৃত্যুর দায় এড়াতে তাদের পাঠানো হয় শহরের নামি-দামী হাসপাতালে বা ক্লিনিকে । তার অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে ইতিমধ্যে অনেক  প্রসূতি মা শিশুসহ  প্রায় ডজন খানেক মানুষের প্রানহানী ঘটেছে। কিন্তু সুচতুর পুলক সকল হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে  ম্যানেজ করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির মত একাধিক অভিযোগ।

 

অভিযোগ অস্বীকার করে লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক পুলক পাল জানান,বিষয়টি নিয়ে পরে কথা হবে। পরবর্তীতে একাধিকবার  তার মুঠো ফোনে ফোন দিলে সংযোগটি  বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ওই ক্লিনিকের এক কর্মচারী জানান, ডাক্তার শাহরিয়ার  কবির ইমন

এবং বরকতউল্লাহ সিজার করেছেন। পরে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাদের আত্মীয়দের জানিয়ে হার্ট ফাউন্ডেশনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।

 

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন  ডা. মোহাম্মদ  আব্দুল সালাম জানান, ঘটনাস্থলে তদন্ত করার জন্য  তালা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার  রাজিব সরদারকে পাঠানো হয়েছে। তিনি ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।  দুই এক দিনের মধ্যে ওই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *