শহিদুল ইসলাম খোকন, গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাজার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু রায়হান ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে সুন্দরগঞ্জ -গাইবান্ধা মহাসড়কে আজ রবিরবার সকালে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ পালিত হয়েছে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।বক্তারেরা অবিলম্বে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।
উল্লেখ্য, বাজারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলতাফ হোসেন তাঁর ১০ সেপ্টেম্বর শেষ কর্মদিবসে সহকারী প্রধান শিক্ষক দীর্ঘ দিন থেকে বরখাস্ত থাকায় সভাপতির পরামর্শক্রমে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু রায়হান কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়া পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুষ্ঠ ভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিলেন।
এর আগে, সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন নীতিমালা বর্হিভুত নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তৎকালীন সভাপতির নির্দেশে সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদকে পরপর ২ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে কোন সদুত্তর না পেয়ে সাময়িক বরখাস্ত করেন । পরে সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ উচ্চ আদালত রিট পিটিশন দায়ের করেন। উচ্চ আদালতের আংশিক রায় ও শিক্ষাবোর্ড তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক স্বপদে বহাল করেন।কিন্তু আব্দুর রশিদ উচ্চ আদালতের রায়কে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে ক্ষমতার জোরে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু রায়হানের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আবু রায়হানের উপর চড়াও হয়ে আব্দুর রশিদ ও মোনারুল গংরা এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে এতে আবু রায়হান অসুস্থ হলে অন্যান্য শিক্ষকেরা তাকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
পরের দিন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করলে চলমান বিক্ষোভের উপর আবারও রশিদ ও মোনারুল গংরা হামলা করেন, এতে শামীম নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হলে দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে আব্দুর রশিদ পাবলিক সিম্ফেতি নিতে সেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ মারামারির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন নিয়ম বহির্ভূত আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন,বরখাস্ত করার পুর্বে আমার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উল্লেখ পূর্বক পরপর ২ বার কারণ দর্শনোর নোটিশ না করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।পরবর্তীতে আমি উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন দায়ের করি,যাহার নম্বর ৫১৬৭। উচ্চ আদালত আমাকে স্বপদে বহাল পূর্বক শিক্ষা বোর্ড কে আদেশ দেন।উচ্চ আদালতের আদেশ ও শিক্ষক বোর্ডের আবেদনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার কাগজ-পত্র দেখে আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। প্রতিষ্ঠান গেলে সহকারী শিক্ষক আবু রায়হান আমাকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে নিষেধ করে। আমাকে তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর দিয়ে মারধার করে। বিষয়টি আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবগত করলে গত ২৬ সেপ্টেম্বর উভয়কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলে।আমি যথা সময়ে হাজির হয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্লেস করি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আবু রায়হান মিয়ার সঙ্গে কথা হয়।তিনি বলেন,আব্দুর রশিদ সাহেব কে মারার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন গত ১০ সেপ্টেম্বর অবসরে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষকের মামলা জটিলতার কারণে সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষক জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে আমাকে বিধি মোতাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন।আমি সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।কিন্তু গত ২২ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে বরখাস্তকৃত সহকারী প্রধান আব্দুর রশিদ ও সহকারী শিক্ষক মোনারুল গংরা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে কম্পিত হয় এবং আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি।পরবর্তীতে আমার সহকর্মীরা আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।বিষয়টি আম উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করি।বিষয়টি নিয়ে ইউএনও মহোদয় ২৬ তারিখে মিটিং দিলে আমি অসুস্থ থাকায় মিটিং এ উপস্থিত হতে পারিনি।তবে আমি লোক মাধ্যমে আমার প্রয়োজনীয় কগজপত্র পেশ করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, প্রধান শিক্ষকের দাবিদার দুই শিক্ষকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে দায়িত্ব দিয়েছি।প্রতিবেদন পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ১০০৫৮/২৪ রিট মামলা থাকায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু রায়হানকে বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।