রেজাউল ইসলামঃ
পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর জায়গা বেআইনী ভাবে দখল করে “এইচ এইচ টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড” নামক একটি মিল নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে বরপায় স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে সোহরাব হোসেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নিজস্ব সার্ভেয়ার দ্বারা সরেজমিনে গিয়ে সরকারি জায়গা মেপে বের করে ডিমার্গেসন করে অবৈধ মিলের কর্তৃপক্ষকে বিল্ডিং ভাঙ্গার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তবে মিল কর্তৃপক্ষ সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভবনটি অদ্যবধি না ভেঙ্গে স্থাপনাটি দৃশ্যমান রেখেছেন। এ নিয়ে জনসাধারণের বিভিন্ন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে, “ফ্যাসিষ্ট সরকার পতনের পরও কিভাবে বা কাদের জোরে আইন উপেক্ষা করে দিব্বি দাঁড়িয়ে আছে এই মিল?”
“এইচ এইচ টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড” এর অবৈধ দখল সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, “নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাবো পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড বরপা বাজার থেকে মাসাবা রোডস্থ আরিয়াবো মৌজায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২. ৯৮ শতাংশ জমি দখলে নিয়ে দির্ঘদিন যাবত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে এইচ এইচ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামীলীগ দোসর সোহরাব হোসেন।”
স্থানীয়রা জানায়, দখলবাজ সোহরাব হোসেন রূপগঞ্জের সাবেক এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর ছত্রছায়ায় ও তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার জুলাই গণহত্যার অন্যতম নির্দেশক হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় তার এসব অপকর্ম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ৬৫ নং ওয়ার্ড এর তৎকালীন কমিশনার সেন্টুর দাপটে স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার প্রদর্শন করতেন। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পত্রিকা প্রতিদিনের কাগজ নাম সর্বস্ব পত্রিকার প্রধান সম্পাদক খাইরুল আলম রফিককে এইচ এইচ টেক্সটাইলর জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে দায়িত্বে রেখে কার্যক্রম চালান ও ফ্যাক্টরির কোন তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে খাইরুল আলম রফিককে কৌশলগতভাবে ফোনে ধরিয়ে দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বাধা ও হুমকি প্রদান করেন। স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ড কমিশনার জাকারিয়া মোল্লাকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়ে অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে নিশ্চিন্তে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নারায়ণগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা এসও এনামুল হক প্রতিবেদককে জানান, “তারা সরেজমিনে এসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব সার্ভেয়ার দ্বারা এইচ এইচ টেক্সটাইলের অবৈধভাবে দখলকৃত ২. ৯৮ শতাংশ জায়গা মেপে বের করে ডিমার্গেসন করেছেন এবং টেক্সটাইলের মালিক কর্তৃপক্ষকে বিল্ডিং ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ কৌশলগতভাবে তাদের সকল নির্দেশনা মেনে নিলেও পরবর্তীতে তা না ভেঙ্গে অদ্যবধি অবৈধ স্থাপনাটি দৃশ্যমান রেখেছেন”।
অপরদিকে ফ্যাক্টরির এজিএম মনিরের সাথে কথা বললে অবৈধভাবে জায়গা দখলের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন “বিষয়টি আমি জানি তবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তারাবো পৌরসভাকে একটি চিঠি দিয়েছেন, সেখানে কি লেখা ছিল আমি জানিনা”।
চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করতে তারাবো পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জেড এম আনোয়ারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মিল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে চিঠি দিয়েছে কিনা জানিনা। আর চিঠি দিয়ে থাকলেও আমি আপনাদেরকে দেখাতে পারছি না কারণ বিগত ৫ আগস্ট এর পরে পৌরসভার সমস্ত কাগজপত্র পুড়ে দিয়েছে উগ্রপন্থীরা। তবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আমরা অবগত আছি যে এইচ এইচ টেক্সটাইলের মালিক সোহরাব হোসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সেখানে বিল্ডিং উঠিয়ে দেদারছে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন সরকারি সম্পত্তি যে কেউই হোক না কেন অবৈধভাবে দখল করা সম্পূর্ণ বেআইনি”।
এই বিষয়ে এইচ এইচ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা না বলে কৌশলে এরিয়ে যান।
অন্যদিকে এইচ এইচ টেক্সটাইলের জনসংযোগ কর্মকর্তা খাইরুল আলম রফিক এর পরিচালিত ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পত্রিকা প্রতিদিনের কাগজে “আমাদের কন্ঠে-র” প্রকাশিত “রূপগঞ্জে সরকারি সম্পত্তি দখলে নিয়ে টেক্সটাইল মিল স্থাপন” সংবাদের প্রতিবাদ জানান। যেখানে সংবাদপত্রটি দাবি করছে উক্ত প্রকাশিত সংবাদ একটি ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ না করে প্রতিহিংসায় ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও তারা দাবি করেন এইচ এইচ টেক্সটাইল কোন সরকারি জায়গা দখল করে নি।
যদিও এমন কথার কোন যুক্তিসংগত তথ্যপ্রমান তুলে না ধরেই তারা এই দাবি করছে। সরেজমিনে আমাদের কন্ঠের প্রতিনিধির তদন্তে যেই তথ্য উঠে আসে তাতে দেখা যায় স্পষ্টভাবে এইচ এইচ টেক্সটাইলের মিল সরকারি জমি দখল করে ভোগ করছে। এছাড়াও অনুসন্ধানে মিল কর্তৃপক্ষের ও পাউবির কর্মকর্তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে একটি সুসংগঠিত ও দায়িত্বশীল প্রতিবেদন প্রকাশ করে আমাদের কন্ঠ। এবং এইচ এইচ টেক্সটাইলের জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ না করায় তারা দাবি করেন প্রতিহিংসায় ভুয়া তথ্যের প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই জনসংযোগ কর্মকর্তা খাইরুল আলম রফিক উক্ত সংবাদপত্র প্রতিদিনের কাগজের প্রধান সম্পাদক, যার বলয় খাটিয়ে তিনি এতদিন আওয়ামীলীগের দোসর সোহরাব হোসেনের এইসব দূর্নীতি ও অপকর্মের তথ্য প্রকাশ হতে কৌশলে বাধা দিতেন ও আমাদের কন্ঠ-র প্রতিবেদককে সংবাদ প্রকাশে বাধা প্রদান ও হুমকি অব্যাহত রয়েছে। তাই এমন সমাজের মুখোশধারী সাংবাদিকের কাছে তার মদদদাতা আওয়ামীলীগের দোসর সোহরাব হোসেনের অপকর্মের বিরুদ্ধে তথ্য জানতে চাওয়া ভিত্তিহীন। মিল কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়ার জন্য মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। তারপর ফ্যাক্টরির এজিএম মনিরের সাথে কথা বললে অবৈধভাবে জায়গা দখলের সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।
এছাড়াও প্রতিদিনের কাগজ তাদের প্রতিবাদে আরো দাবি করেন সোহরাব হোসেন রূপগঞ্জের সাবেক এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে কোনভাবে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু আমাদের কন্ঠে-র অনুসন্ধানে উঠে আসে এই সোহরাব হোসেন ফ্যাসিস্ট সরকার থাকাকালীন সময় আওয়ামীলীগ নেতাদের ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের আমলাদের সাথে সংযুক্ত থেকে ক্ষমতার বলয় খাঁটিয়ে এইসব অপকর্ম ও দুর্নীতি করতেন।