কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা পূর্ব খরুলিয়া মেহেরআলী পাড়া এলাকায় প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতি ও ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে সাবেক এমএসবি বর্তমান এমআরএ ইটভাটার কার্যক্রম।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ নেতা সফিউল হক ক্ষমতার প্রভাবকাটিয়ে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে কোন ধরনের অনুমতি না নিয়ে এই ইট ভাটা পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। পরিবেশ ও কৃষি জমি ধ্বংস করে ইটভাটা পরিচালনা করার দায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদর ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অভিযান চালিয়ে একলক্ষ টাকা জরিমানা ও ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর ফের ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের পূর্ব খরুলিয়ার মেহেরআলী পাড়ার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র আইনের কোন তোয়াক্কা না করে অননুমোদিত অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছিল।এতে করে জীববৈচিত্র্য ও আশপাশের বসবাসকারী লোকজনের চরম ক্ষতি হলেও ইটভাটা পরিচালনাকারী প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ মুখখোলার সাহস করে না। বিগত সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারের চাচাত ভাই সফিকুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন (এমএসবি) বর্তমানে এমআরএ ইটভাটা প্রশাসনের কোন ধরনের অনুমতি বা ছাড়পত্র না নিয়ে একপ্রকার গায়ের জোরে ইটভাটা কার্যক্রম শুরু করে দেয় সফিকুল হক। আ’ লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করলেও গত ৫আগষ্ট আ’লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে সফিকুল হক এর মালিকানাধীন এমএসবি ইটভাটা নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এমআরএ।কৌশলে মালিকানা বদল করে রাজিব নামে এক লোককে ভাড়া দেওয়া হয় এমএসবি ইটভাটা।
আরও জানা যায়, নামে মাত্র রাজিবকে ভাড়া দিয়ে নাম পরিবর্তন করলেও মূলত সেই ইটভাটা পরিচালনা করছেন সফিকুল হক চৌধুরী নিজেই। ইট তৈরিতে কৃষি জমির মাটি ব্যবহার আইনগত নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না ইটভাটা মালিকেরা।অভিযোগ আছে রাতের আঁধারে ইটভাটার আশপাশের এলাকার কৃষি হতে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে অবৈধ ডাম্পার গাড়ী দিয়ে মাটি লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ২ টার দিকে মোঃ আলম নামে স্থানীয় এক লোকের কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যায়। পরদিন জমি মালিক মোঃ আলম খোঁজ নিয়ে জানতে পারে লুট হওয়া মাটি সফিকুল হকের মালিকানাধীন এমএসবি ইটভাটায় নেওয়া হয়েছে। তখন জমি মালিক মোঃ আলম ইটভাটার মালিকের কাছে জানতে চান কেন তার কৃষি জমির মাটি কাটা হলো তখনই সফিকুল হকের নেতৃত্বে আরও ৮/৯ লোকজন নিয়ে জমি মালিককে মারধর করে। আহত জমি মালিক জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে তাৎক্ষণিক রামু থানা হতে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে।তখন ইটভাটা মালিক সফিকুল হক জমি মালিকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে জমি মালিকের উপর আবারও হামলা চালানো হয়। এতে জমি মালিক গুরুতর আহতও হয়। এ নিয়ে রামু থানায় অভিযোগ দায়ের করে জমি মালিক মোঃ আলম। বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিক বলেন,ইটভাটার মালিকেরা রাতের আঁধারে আমাদের খতিয়ানভুক্ত কৃষি জমির মাটি লুট করে নেওয়ার কারনে আমাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহ করার সম্বলটুকু নষ্ট করে দেওয়ার কারনে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।বিষয়টি সুষ্ঠু বিচার চায় ভুক্তভোগীরা।
প্রশাসনের অভিযানের পরে কিভাবে ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে জানতে চাইলে এমআরএ ইটভাটার ভাড়াটিয়া মালিক দাবীদার রাজিব বলেন,আমরা এ বছরের ছাড়পত্র পাইনি তবে আরও যারা ইটভাটা চালাচ্ছে তাদের মত আমরাও চালাচ্ছি। প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি।এ মৌসুমের অল্পসময় রয়েছে যে ইটগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলো পুড়ানোর ব্যবস্থা করতেছি।
সার্বিক বিষয়ে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদর শারমিন সুলতানার সাথে। তিনি বলেন,অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। যদি পুনরায় অবৈধ ইটভাটা আবারও চালু রাখা হয় তা হলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।