কলাপাড়ার ধান বিক্রিতে দালাল ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি কৃষকরা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

এস এম আলমগীর হোসেন, কলাপাড়াঃ

ধান বিক্রিতে কলাপাড়ার কৃষকরা নির্দিষ্ট দালাল ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। গত দেড়যুগ ধরে রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রিত এই সিন্ডিকেটের জিম্মি দশায় তারা আটকে রয়েছে। বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকলেও পরোক্ষভাবে একটি দলের ক্যাডারদের মাধ্যমে মধ্যস্বত্তভোগী ওই নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেট কৃষককে অক্টোপাসের মতো আটকে রেখেছে। তাদের ধার্য দামে ধান বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে মণ প্রতি অন্তত ২০-৩০ টাকা কম পাচ্ছে দাম। এছাড়া প্রতিবস্তা ধান বিক্রিতে বস্তার ওজন বাবদ এক কেজি এবং ভেঁজা-ময়লার (স্থানীয় ভাষায় ধরতা) অজুহাতে আরও এক কেজি ধান কৃষকের কাছ থেকে ফড়িয়া-দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে কলাপাড়ায় কৃষকের উৎপাদিত আমন ধান বিক্রিকালে মধ্যস্বত্তভোগী ওই চক্র ফি বছর অন্তত দুই হাজার ৭২০ মেট্রিক টন ধান কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। যা টাকার মূলে কমপক্ষে আট কোটি ১৬ লাখ টাকা। কৃষককে জিম্মিদশায় ফেলে তাদের কোটি কোটি টাকার উৎপাদিত খাদ্য শস্য ফি বছর এভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল-ফড়িয়া সিন্ডিকেট।

কৃষক জাকির গাজী জানান, তিনি এ বছর খোরাকি রেখে বাড়তি ১৭ মণ ধান বিক্রি করেছেন। ৪২ কেজিতে মণ হিসেবে ১১২০ টাকা দরে এই ধান বিক্রি করেছেন। যেখানে বস্তা প্রতি এক কেজি এবং ধরতা হিসেবে আরও এক কেজি দেওয়া হয়েছে। তার মতে একটি খালি বস্তায় ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজন হয়। এছাড়া ধানে ময়লা-আবর্জনা এবং ঝাড়া কম থাকায় মণ প্রতি আরো এক কেজি ধান বেশি দিতে হয়েছে। এভাবে কৃষক বাধ্য হয়ে এটিকে ধান বিক্রির প্রথা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। ক্ষতির বিষয়টি তারা তেমন বেশি আমলে নিচ্ছেন না। তবে বেশি নেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন বলে জানান অধিকাংশ কৃষক।

ধানের পাইকারি ক্রেতা দালাল কিংবা ফড়িয়া এদের একজন মোঃ হারুণ জানালেন, তারা বড় এবং ছোট মণ হিসেবে ধান কেনেন। বড় মণে ৪৬ কেজি, ছোট মণে ৪২ কেজি। বস্তার ঘাটতি বাবাদ এক কেজি বেশি এবং যদি ধান ভেঁজা-স্যাতসেতে থাকে তাইলে আরো এক কেজি বেশি নিয়ে থাকেন। কৃষকের সঙ্গে কথা বলেই এমন সিস্টেমে তারা ধান কেনাকাটা করছেন। হারুনের দেওয়া তথ্যে কলাপাড়ায় ৫০-৬০ জনে ধানের ব্যবসা করেন। ফি বছর ১০-১২ হাজার মণ ধান কেনেন একেকজনে। কৃষকরা স্বেচ্ছায় উপায় না পেয়ে এভাবেই ধান বিক্রি করে আসছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যানুসারে এবছর ৩০ হাজার ৬৯৮ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। যেখানে ধানের ফলন হয়েছে অন্তত এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এখানকার ২২ সালের জনশুমারি অনুসারে মোট জনসংখ্য দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৮ জন। যেখানে সর্বোচ্চ খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৬২ হাজার মেট্রিকটন। এছাড়া বীজধানের জন্য কৃষকরা সংরক্ষণ করে আরও প্রায় এক হাজার মেট্রিকটন ধান। বাকি অন্তত ৬৮ লাখ টন ধান বিক্রি করেন। দালাল-ফড়িয়ারা এ পরিমাণ ধান ক্রয় করেন। গড়ে এ বছর ৩০ টাকা কেজি দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। দালাল-ফড়িয়রা একেকটি বস্তায় ৪৭-৫০ কেজি ধান ভর্তি করে নেয়। ওই হিসেবে ৬৮ হাজার টন ধানে ১৩ লাখ ৬০ হাজার বস্তা ধান বিক্রি করা হয়। এ ধান কেনার সময় প্রতি বস্তায় বস্তার ওজন বাবদ এক কেজি এবং ধানের মান নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ধরতা হিসেবে আরো এক কেজি ধান বিনামূল্যে হাতিয়ে নেয় ক্রেতা দালাল ফড়িয়া। এই স্বঘোষিত প্রথার কাছে কৃষকরা জিম্মি হয়ে আছে। অবস্থা এমন যে কৃষকরা ইচ্ছা করলেই অন্য এলাকার ফড়িয়া-দালালের কাছে ধান বিক্রি করতে পারে না। কারণ নির্দিষ্ট দালাল-ফড়িয়া ইউনিয়ন ভিত্তিক এরিয়ার ধান ক্রয় করে। কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়নে এভাবে অর্ধশতাধিক দালাল-ফড়িয়া রয়েছে। কৃষকরা আবার বাধ্য হয়ে দাদন বাবদ কমবেশি টাকা দালালের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়। অনেক সময় দরদাম ঠিক না করেই কৃষকরা ধান বিক্রি করে দেয় । ফলে দালাল-ফড়িয়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম ভেঙে বের হয়ে আসতে পারে না।

তবে এ বছর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলামের উদ্যোগে কৃষক, ধানের দালাল-ফড়িয়া, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার সকল মানুষকে একত্রিত করে এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে যেভাবেই ধান কিনবে, তা যেন কেজি হিসেবে দরদাম করতে হবে। মিটারে মাপ দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। ফলে কৃষকের অনেক ক্ষতি কমেছে। মণ প্রতি ৫-৬ কেজি বেশি নেওয়ার প্রথা অনেকটা বন্ধ হয়েছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement