গাজীপুরে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে মহাসড়কে বিক্ষোভ

গাজীপুর থেকে জহিরুল ইসলাম:

গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ অবরোধ করে চাকরি স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং পুরুষ শ্রমিক নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। সোমবার সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগরা, নাওজোর, কোনাবাড়ি, বোর্ডবাজার ও টঙ্গীতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে এবং কয়েকটি স্থানে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় ভোগান্তি পড়ে ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও পথচারীরা।

জানা যায়, গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কেবলমাত্র নারী শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পুরুষ শ্রমিকরা। তাই কারখানাগুলোতে গাজীপুর মহানগরীর চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস এলাকায় পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন কারখানার চাকরি বঞ্চিত পুরুষরা সড়কে নেমে আসেন। পুরুষ পোশাক শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। গাজীপুর কোনাবাড়ীতেও ডিবিএলের ওষুধ কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন। এছাড়া টঙ্গী এলাকার বাটা সু-কোম্পানির শ্রমিকরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।

চাকরির দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিক্ষোভ, কারখানায় ভাংচুর করেছে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টঙ্গীর বিসিক এলাকায় এ বিক্ষোভে যোগ দেয় কয়েকশ শ্রমিক। এ সময় চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ১১টি পোশাক কারখানায় ভাংচুর চালায়। এসময় চাকরিচ্যুত দুইজন শ্রমিক একজন নারী ও পরজন পুরুষ আহত হয়। আন্দোলনকারীরা আহত বাদশা মিয়াকে (২১) উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয় এবং অপর অজ্ঞাত এক নারী শ্রমিকে নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।পরে ছুটি ঘোষনা করা হয়, টঙ্গীর বিসিক এলাকার  টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো এ্যাপারেল লিমিটেড,  বেলিসিমা এ্যাপারেল্স লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি এ্যাপারেলস লিমিটেড, তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড ও গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে কারখানায় কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার সকল পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চাকরিচ্যুত প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক কয়েক ধাপে নয়টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেয়। পরে কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাদের (চাকরিচ্যুত) সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে আহবান জানায়। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে চাকরীচ্যুত  শ্রমিকরা ১১টি কারখানায় ভাংচুর চালায়। নিজ কারখানায় ভাংচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সাথে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ভাংচুর এড়াতে ওই নয়টি কারখানা গুলোতে ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

বেলা দুইটার দিকে কারখানা গুলোতে ছুটি ঘোষনা করলে চাকরিচ্যুত  শ্রমিকরা টঙ্গীর বিসিক এলাকার পানির ট্যাঙ্কি এলাকার শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা টঙ্গী বিসিক এলাকার শাখা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে রাখে।

তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাংচুর চালায়। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।

অপরদিকে, টঙ্গীতে চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধিসহ ৮ দফা দাবিতে বাটা সু-কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিকদের বিক্ষোভ। সোমবার সকাল ৯টা থেকে টঙ্গীর বাটার শ্রমিকেরা কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থান করছেন। কারখানার মেইন গেইট বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের আন্দোলন করতে দেখা গেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ  ইব্রাহিম খান বলেন, আন্দোলনে কিছুদিন ধরেই মহাসড়কে যান চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সকালে চাকুরীর দাবিতে পুরুষ শ্রমিকরা “তুমিকে আমিকে বেকার বেকার” স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করে। পরে তাদের বুঝিয়ে এবং কয়েকটি কারখানার মালিকদের সাথে আলোচনা করে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিলে মহাসড়কে যানচলাচল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে স্বাভাকি হয়।

গাছা থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দুপুরে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যান চলাচন স্বাভাকি হয়।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *