আবু জাফর মন্ডলঃ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আদরে লালিত হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পরিবারের মাঝেই হারিকেন বাতি আলোকিত করতো। সন্ধ্যার পর হতেই রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন। ৯০ দশকরে র্পূবে ও কিছুকাল পর দেশ বিদেশি চাকরিসহ নানা উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত থাকাদের মধ্যে অনকেইে পড়ালেখা করেছেন এই হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বিয়ে জন্মদিন বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে লোকের সমাগম হলে ব্যবহার হতো হ্যাজাক, পাশাপাশি জমা রাখা হতো এই হারিকেন। যুগের পরির্বতনের পাশাপাশি হারিকেনের স্থান দখল করছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জার বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে গ্রাম ও শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ এখন গ্রাম থেকেও প্রায় বিলুপ্তি হচ্ছে।
হারিকেন জ্বালিয়ে বাড়ীর উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতে পথচলার জন্য ব্যবহার করা হত হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন আনার জন্য প্রায় বাড়ীতেই থাকত কাঁচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। গ্রাম গঞ্জের হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে যেতে হতো হাটে, এ দৃশ্য বেশি দিন আগের নয়।
সরেজমিনে দেখা যায় পলাশবাড়ী উপজেলা মনোহরপুর ইউনিয়নে কুমেতপুর গ্রামের হোমিও চিকিৎসক আব্দুল হক সরকারকে হারিকেন ব্যবহার।তিনি বলেন আমাদের বাড়ীতে দেশ স্বাধীনের র্পূব হতেই কেরোসিনের বাতি এবং পরর্বতীতে হারিকেনের ব্যবহার করা হতো। যাহা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন,কুমিতপুর বাজারে থেকে প্রতিদিন রাতে হারিকেনের সাহায্যে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরি।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান,আমরা র্দীঘদিন যাবৎ ব্যাবসা করছি সেই ১৯৯০-`৯৫ সালের কথা,দোকানে হারিকেন, বিক্রি করতাম। আজ ৩৫/৪০ বছর পর এসে দেখি হারিকেন, বেচাকেনা নেই।
পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম সরকার বলনে, হারিকেন আমাদের পরম বন্ধু ছিল, হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। এখনকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে হারিকেন এর কথা কাল্পনীক মনে হবে। ঘরে বিদ্যুৎ,সোলার থাকায় আজ হারিকেনের কোন প্রয়োজন নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হারিকেন এর বিষয়ে ইতিহাসে স্থান দেওয়া উচতি।