বগুড়া প্রতিনিধিঃ
প্রতিহিংসা বিতর্ক, চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম দুর্নীতিতে নির্মিত হচ্ছে বগুড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। অপরিকল্পিত এই নির্মানে খোকন পার্কের মাঠটির প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে পার্কের নানা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শিশু পার্কে শিশুদের খেলাধুলা, সাধারণ মানুষদের বিশ্রাম ও বসবার ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন সময় খন্ডকালীন নানা ধরনের অনুষ্ঠানগুলো বাধাঁর মুখে পড়েছে। তবে এমন অনিয়মের প্রতিবাদ করতে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। পৌরসভার দাবি তাদেরকে না জানিয়েই জোর জবরদস্তি করে এই স্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে।
বর্তমানে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত শহীদ মিনারটিতে ব্যবহার হচ্ছে নিম্ন মানের ইট, বালু, লোহাসহ অন্যান্য সামগ্রী কিন্তু কোন নজরদারি নেই জেলা পরিষদের। ঠিকাদারের ইচ্ছেমতোই নির্মিত হচ্ছে মিনারটি।
অনিয়ম ছাড়াও শহীদ মিনারটি নির্মানের নেপথ্যে রয়েছে নানা ধরনের প্রতিহিংসা। অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে বগুড়ার কারুশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল করিম দুলালের নকশায় শহীদ খোকন পার্কের উত্তর-পূর্ব কোণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। ইটের গাথুনীতে নির্মিত মিনারের উপরিভাগে ‘ক খ’ ও ‘অ আ’ অক্ষর খোদায় করা ছিল। কিন্তু চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৫ সালে পৌর কর্তৃপক্ষ মিনারটি ভেঙে ফেলে। পরে সেখানে পূণরায় একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। মিনারটিতে ‘ব এ ন প ঢ’ অক্ষর সজ্জিত করা হয়। ওই সময় মিনারের অক্ষর বিন্যাস দেখে অনেকেই নানা ধরনের মন্তব্য করেছিলেন নানা প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মিনারটি অপসারনে নানা ধরনের প্রতিবাদ গড়ে তোলেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে দফায় দফায় আবেদন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ায় আসলে মিনারটি পুনঃ নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুরোধ জানালেও কোন কাজ হয়নি। তবে মিনার বিরোধীরাও লেগেই ছিল এটি অপসারনে। এক পর্যায়ে ২০২৪ সালের আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরেই নতুন শহীদ মিনার নির্মানের উদ্দ্যেগ নেয় সাবেক সাংসদ ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। এক পর্যায়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। “তবে এই বরাদ্দকে অবৈধ দাবি করেন পৌর কর্তৃপক্ষ” এর পর সুযোগ বুঝে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতারাতি ভেঙ্গে ফেলা হয় মিনারটি। এর প্রতিবাদে বিএনপি অংগ সংগঠনের কয়েকটি বিক্ষোভ মিছিলও ও মানববন্ধন দেখা গেলেও জোরালো কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। ওই সময় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম বাদশা বগুড়া পৌর মেয়র থাকলেও আওয়ামী লীগের দাপটে তেমন কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।
বীগত সময়ের তিনটি শহীদ মিনার স্বল্প জায়গা জুরে এবং বেশ উচু পরিসরে নির্মান করা হয়েছিল। শ্রদ্ধা নিবেদনে ফুলের মাল্য দিতে কোন অসুবিধা হতোনা বরং কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যেতো। যা এক পূর্ণতা এনে দিতো খোকন পার্ককে। বিভিন্ন দিবসগুলোতে সাধারণত শহরের মুক্তির ফুলবাড়ি মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
তারেক রহমান কর্তৃক নির্মিত শহীদ মিনারটি উচ্ছেদ করা হলেও ওই সময় তারেক রহমান কর্তৃক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ফলকটি এখনো রয়ে গেছে। এতোদিন নোংরা পরিবেশে থাকলেও কিছুদিন আগে একটু পরিস্কার করা হয়েছে। ফলকটিতে লেখা রয়েছে, বগুড়া শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহীদ খোন পার্ক ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আধুনিকীকরণ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব জনাব তারেক রহমান। তারিখ ১২ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ ইং। বর্তমানে ভিত্তি প্রস্তরের ফলকটি নিয়ে নানা বিরম্বনায় পরেছে কর্তৃপক্ষ। কারন ফলক থাকলেও নেই শহীদ মিনার।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোহায়েদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন। এখানে কোন নিম্নমানের কাজ হয়নি। প্রথমের দিকে হয়েছিল, তবে সেটি বন্ধ করা হয়েছে। তারেক রহমানের ফলকের বিষয়ে বলেন ওটা নিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পাচ্ছিনা।
এ বিষয়ে সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন অতি সুন্দর একটি শহীদ মিনার ভেঙ্গে মস্তবড় মিনারটি নির্মান এক ধরনের তামাসা। মিনারটি নির্মান এতোটাই নিম্ন মানের হচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। এছার পৌরসভার অনুমতি ব্যতিত এই স্থাপনা নির্মান একেবারেই অবৈধ।
বগুড়া পৌর প্রশাসক ও ডিডিএলজি মোঃ মাসুম আলী বেগ বলেন, শহীদ মিনারটি নিয়ে এই মূহুর্তে কিছু বলতে পাচ্ছিনা। তবে তারেক রহমানের ভিত্তি প্রস্তরের বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এটিকে যত্নসহকারে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোছাঃ হোসনা আফরোজা বলেন, শহীদ মিনারের নির্মান কাজ আমি নিজেই পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষন করে দেখবো। নিম্নমানের হলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এটি নিয়ে যেনো কোন ধরনের বিতর্ক না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সচেতন মহল ও স্থানীয়দের দাবি। দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো উন্মুক্ত স্থানে শহীদ মিনার হওয়া প্রয়োজন। ছোট্ট একটি পার্কের মধ্যে ঘিঞ্জি পরিবেশে শহীদ মিনারের পরিবর্তে উন্মুক্তস্থানে স্থাপন হওয়া অতি জরুরী।