তিতাস গ্যাসে কর্মচারী বদলির তুঘলকি কাণ্ড, নেপথ্যে অনুমোদন বিহীন কর্মচারী ইউনিয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এমডি শাহনেওয়াজ পারভেজ যোগদান করার পর থেকে কোম্পানীতে রামের রাজত্ব কায়েম করেছে শ্রম অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন স্বঘোষিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন(বি-১৯৪০) এর নেতারা। এই কমিটির নেতা ফয়েজ আহমেদ লিটন (কোডনং-০৮৫৮৫) বিরুদ্ধে নিজেকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এর স্বাক্ষর জাল করে চিঠি বানিয়ে নিজেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারনা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

এ কারণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ফয়েজ আহমেদ লিটনকে শ্রমিক দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কার করতে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়। অথচ এই জালিয়াত চক্রটি বর্তমানে তিতাস গ্যাসকে গিলে খেতে বর্তমান এমডি শাহ নেওয়াজ পারভেজ এর নেতৃত্বে  ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন।

 

তৎকালীন এমডি হারুনুর রশিদ মোল্লাহ থাকতে  সিনিয়র বিক্রয় সহকারি ফয়েজ আহমেদ লিটন গত এক মাসে দুই বার পছন্দের জায়গায় বদলি হয়েছেন।গত ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট সোনারগাঁ থেকে বদলি হয়ে গেলেও মেঢাবিবি-৪ এ আসেন এর দুই সপ্তাহ না পেরোতেই ২২ আগষ্ট সেখান থেকে বদলি হয়ে আবিবি-সোনারগাঁও এলাকায় বদলি হয়ে আসেন।

 

এছাড়াও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর সাবেক গাড়ি চালক সাইফুল ইসলাম ( কোড নং-০৯৮৮৩) কে এক মাসে চারবার বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। গত ২ আগষ্ট মেঢাবিবি-৬ থেকে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থাপন বিভাগে বদলি করা হয় , এরপর আবার ২২ আগস্ট আরেকবার বদলি করা হয়,১৮ সেপ্টেম্বর তাকে মেঢাবিবি-৬ থেকে পুনরায় বদলি করা হয়, ৬ নভেম্বর একবার মেট্রো বিপণন বিভাগ-৫ এ বদলি করা হয়, সেই স্থানেও ভালো না লাগায় তার পছন্দের জায়গা ধানমন্ডি অফিসে বর্তমানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এভাবে শতাধিক কর্মচারী নিজেদের পছন্দের জায়গায় বদলি হয়ে যাচ্ছে যখন তখন।তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ এবং দুর্নীতির মোক্ষম জায়গায় নিয়োগ পেতে মরিয়া যেসব কর্মচারী তাদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন বর্তমান এমডি।

 

তিতাস গ্যাস সব সময়ই লুটপাটের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দূর্নীতিবাজদের টাকার পাহাড় বানানোর মেশিন ছিল। রাজনৈতিক ভাবে যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল সেই দলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা প্রভাব বিস্তার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির মহোৎসব করেছে। গত পাঁচ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশে একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও লুটপাট কোন অংশে কমেনি। তিতাসের এই লুটেরা গোষ্ঠী বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহা নেওয়াজ পারভেজকে ম্যানেজ করে ইতোমধ্যেই ১০০ কর্মচারীকে সুবিধাজনক জায়গায় বদলি করেছে।

 

তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিবিএ নেতারা ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর বিএনপি সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে চাকরি থেকে অবসর নেয়া একজন কর্মচারীর নেতৃত্বে চর দখলের মত অবৈধভাবে সিবিএ অফিসের তালা ভেঙে দখল করে বসে পড়ে। তিতাস গ্যাসের বিএনপি সমর্থিত দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। যার একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক কর্মচারী বর্তমান জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতি খন্দকার জুলফিকার মতিন অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ হারুন। বর্তমানে হালুয়া রুটি ভাগাভাগিতে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুটিগ্রুপ একত্রিত হয়েছে।

 

তারা তাদের শক্তির জানান দিতে বর্তমান এমডি কে নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল ১১:৩০ টায় তিতাস গ্যাসের প্রধান কার্যালয়ে একটি সভা আয়োজন করে। পরবর্তীতে সেই আয়োজিত সভাকে পুঁজি করে তাদের অনুমোদনবিহীন অবৈধ কমিটিকে জায়েজ করার জন্য নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়।

 

এছাড়াও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা ফয়েজ আহমেদ লিটন নিজেকে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে প্রচার করে চলেছেন। বর্তমানে তিতাস গ্যাসের জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়ন চলছে চাকরি থেকে অবসর নেয়া খন্দকার জুলফিকার মতিনএবং প্রতারক ফয়েজ আহমেদ লিটনের নির্দেশে। আর তাদের এসব অপকর্মের গডফাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন নবনিযুক্ত তিতাস গ্যাসের এমডি শাহনেওয়াজ পারভেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *