খেলাফত হোসেন খসরু, পিরোজপুর:
নার্সিং পরীক্ষায় ফেল করায় পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে ভোল পাল্টে সমন্বয়ক হওয়া মিজান নামের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মিজান সিরাজগঞ্জের তারাস উপজেলার আবু তালেবের ছেলে এবং পিরোজপুর নার্সিং ইন্সটিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এক বিষয় অকৃতকার্য হওয়ার পর থেকে ইনচার্জের বিরুদ্ধে মামলার হুমকিসহ অত্র ইন্সটিটিউটের অনেক ইনস্ট্রাক্টরকে বিভিন্নভাবে হয়রানীর অভিযোগ উঠে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে। হুমকির স্বীকার পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের হয়রানী স্বীকার হওয়া ইনস্ট্রাক্টর এবং নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ বেবী রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নার্সিং ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধীনে গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) প্রকাশিত হয়। তাতে তিনি এক বিষয় অকৃতকার্য হন। পরে তিনি প্রভাবশালী নার্স নেতা, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা দিয়ে নার্সিং ইনস্টিটিউটের কর্তৃপক্ষকে ফোন দিয়ে পাশ করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাতেও কাজ না হলে প্রতিষ্ঠানের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ বেবী রায়কে মামলা করার হুমকিও দেন।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রক্টর প্রভা রানী বড়াল বলেন, মিজানুর রহমান আমাদের নার্সিং ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী, গত ১১ মার্চ বিএনএমসির রেজাল্ট দেয়ার পর থেকে সে বিভিন্নভাবে সমন্বয় ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মী দিয়ে ফোন দিয়ে আমাদের পাশ করানোর ব্যাপারে হুমকি দেয়। সে যে বিষয়ে ফেল করেছে সে বিষয়ে আমাদের কোন টিচার পরীক্ষা নেয় নি। সাধারন, ঐ বিষয়ে বাহির থেকে টিচার নিয়োগ দেয়া হয়। আমরা টিচার হিসেবে কখনওই কোন শিক্ষার্থী ফেল করুক সেটা চাই না।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর সাজেদা খানম বলেন, মিজান আমাদের অত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ক্লাসে খুব অমনোযোগী ছিল। সে প্রথম বছরে ১ বিষয়ে ফেল করে। তখন বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা না করলেও এবারে ফেল করে সে বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানী করছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সকল ইনস্টাক্টরসহ সকল শিক্ষার্থীরা বিবর্তবোধ করছি। ফেল, পাশ পরীক্ষার একটি অংশ সে আবার কিছুদিন পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু তার এই উগ্রতা পূর্ণ এমন আচরনে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি।
নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর নিপা মন্ডল বলেন, মিজান প্রথম বছর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অনিয়মিত ছিল। অনিয়মিত হওয়ার কারন তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিতো। আমরা তার আর্থিক দিক বিবেচনা করে কখনও কিছু বলি নি। সে প্রথম বছরে ও ফেল করেছে। থার্ড ইয়ারেও এক বিষয়ে খারাপ হয়েছে। সব সময় যে ভাল রেজাল্ট হবে বিষয়টি এমন নয়। তাছাড়া আমাদের অত্র ইনস্টিটিউট থেকে এবছর ৫ জন ফেল করেছে। কারও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য নেই শুধু মিজান বিভিন্ন ভাবে আমাদের হয়রানী করতেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
আশরাফুল ইসলাম নামে দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, মিজান ভাই যে বিষয়ে পরীক্ষায় ফেল করেছেন সে বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার পরেই অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের তিনি বলেছেন তার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানে অনেক আলোচনা হয়েছে, বিষয়টি আমি শুনেছি। পরীক্ষায় ফেল হতেই পারে কিন্তু তিনি কেন এমন আচরন করছে কিছু বুঝতেছি না। এই প্রতিষ্ঠানের সকল ইনস্ট্রাক্টর আমাদেরকে সন্তানের মত জানেন। তাদের আচার-আচারনে সকল শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট। একজন শিক্ষক কখনওই চান না তার শিক্ষার্থী ফেল করুক। সে এমন আচরন করে বিষয়টি ঠিক করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, মিজান সবসময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমে প্রভাব দেখাতো। সে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিতো। গত ৫ আগষ্টের পর হঠাৎ তিনি সমন্বয়ক বনে যান। তিনি পরীক্ষায় ফেল করে আমাদের ইনস্ট্রাক্টরদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। পড়া লেখায় পাশ ফেল তো থাকবেই এটা কেন মানতে পারবেনা, এখানে কেন প্রভাব দেখাতে হবে। অবিলম্বে তাকে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কার করা উচিত তার ছাত্রত্ব বাতিল করা উচিত।
এ বিষয়ে পিরোজপুর নার্সিং ইনস্টিটিউটের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ বেবী রায় বলেন, মিজান ৫ আগষ্টের পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে চলেছে। এখনো প্রভাব খাটাচ্ছে। কোন এক অদৃশ্য হাত তার পিছনে কাজ করছে। পরীক্ষার আগে মিজান দলবল সহ এসে পরীক্ষার হল ছেড়ে দেওয়া সহ পাশ করাতে হুমকি দেন। পরে পরিক্ষায় ফেল করলে আমার নামে মিথ্যাচার ও আমাকে মামলাসহ বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে মিজান রহমান বলেন, তারা আমার শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা কোন খারাপ কথাও আমি বলিনি। তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু ফোনে বলবেন না বলে কল কেটে দেন।