পাইকগাছায় শাপলা ফুল বিক্রি করে সংসার চলছে এরফানের 

মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:

হেমন্তে খালে বিলে ফুটেছে শাপলা ফুল । দেখতে যেমন সুন্দর, তরকারি হিসেবে খেতেও সুস্বাদু। দাম কম হওয়ায় নিম্নবিত্তদের কাছে এর চাহিদা অনেক। সুস্বাদু হওয়ায় ধনীরাও খায়। গ্রাম-বাংলায় খাল কিংবা ডোবায় বর্ষা মৌসুমে দেখা মেলে এই শাপলা ফুলের। আর এই শাপলা বিক্রি করে অনেক পরিবারের সংসার চলে।

সাধারণত বর্ষা মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসলেও বিল পাড়ের মানুষের জন্য বয়ে নিয়ে আসে আশির্বাদ। নতুন পানিতে ফুটে অসংখ্য শাপলা ফুল। ভোরে এসব ফুল একসাথে ফুটে উঠলে মনে হয় যেন শাপলার সাম্রাজ্য। আর এই শাপলাই স্থানীয়দের আহার যোগাতে সহযোগিতা করে।

শাপলা সংগ্রহকারী পাইকগাছা উপজেলার নাবা গ্রামের এরফান কাগুজী জানান, প্রতিদিন সকালে ক্ষেত থেকে শাপলা উঠিয়ে বিক্রি করেন। বর্ষার সময় শাপলায় তাদের পরিবারের জীবন চলে। ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিলে শাপলা তোলা হয়। দৈনিক একজন কমপক্ষে ৫০ আঁটি শাপলা তুলতে পারেন। ভ্যানে করে স্থানীয় বাজারে শাপলা বিক্রি করেন।

শাপলা ফুল সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। শাপলা ফুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন অনেকেই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ১২-১৫টি শাপলা দিয়ে আঁটি বিক্রি করা হয়। এক আটি লাল শাপলা ৩০ টাকা ও সাদা শাপলা ২০ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও স্থানীয় অনেকেই শাপলা বিক্রির টাকায় সংসার চালাচ্ছেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পড়াচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে আগে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্তরা শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি ও ভর্তা করে খেত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন শহরের বাজারেও সহজলভ্য শাপলা। সুস্বাদু হওয়ায় শহরেও তাই চাহিদা বাড়ছে। খাবার হিসেবে যেমনই হোক বর্ষা মৌসুমে পাইকগাছা উপজেলার অনেক পরিবারের জীবিকার মাধ্যম এই শাপলা। বিল থেকে শাপলা তুলে এসব পরিবার সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করে। বছরে দুই থেকে তিন মাস শাপলা বিক্রি করেই চলে এসব পরিবার।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, শাপলা মানুষ চাষাবাদ করে ফলায় না। প্রাকৃতিক নিয়মেই বর্ষার পানিতে বেড়ে ওঠে। কোনধরনের যত্ন ও পরিচর্যা করা লাগে না। কিন্তু আমরা যদি আমাদের মাটিকে উর্বর, কিটনাশক মুক্ত রাখতে না পারি তাহলে প্রকৃতির এই উপহার একদিন আমাদের চোখের সামনেই হারিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই বর্ষায় অধিকাংশ নিচু জমিতেই পানি থাকে, এজন্য প্রচুর শাপলা হয়। বহু কৃষক এসব শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন। যদি ঠিকমতো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়, তবে এটিও আয়ের ভালো উৎস হতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *