সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
কারো লাইসেন্স আছে রিকশা নেই, কারো রিকশা আছে লাইসেন্স নেই। কেউ দেড়শতাধিক রিকশার লাইসেন্সের মালিক, কেউ শতাধিক রিকশার লাইসেন্সের মালিক, আবার কেউ একটি রিকশার লাইসেন্সও পায় না। পৌর কর্তৃপক্ষের দ্বারা লাইসেন্স বিহীন রিকশার অভিযানের ভয়ে লাইসেন্স না থাকা রিকশার মালিকরা রিকশার লাইসেন্স থাকা মালিকদের (রিকশা না থাকা) কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে থাকে। রিকশা না থাকা লাইসেন্সের মালিকেরা লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে প্রতিটি লাইসেন্স বাবদ দৈনিক দুইশতো থেকে আড়াইশতো টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে। রিকশা ভাড়ায় চালিত চালকগণ দৈনিক চারশতো থেকে সাড়ে চারশতো টাকা ভাড়া রিকশা মালিকদেরকে প্রদান করে। রিকশা চালকগণ রিকশা মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। রিকশা চালকরা যেমন মালিক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি তেমনি যাত্রীরাও রিকশা চালকদের কাছে জিম্মি রয়েছে। যার ফলে রিকশা চালক এবং যাত্রীদের মাঝে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই বাকবিতণ্ডা চলছেই। যাত্রী বলছেন, রিকশার চালকগণ নিজের খেয়াল খুশিমত অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকাচ্ছে। রিকশা চালকগণ বলছেন, রিকশার মালিকগণ দৈনিক অতিরিক্ত জমা আদায় করছে, পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, রিকশার মালিকগণ আমাদের নির্দেশনা শুনছেনা। চালক-মালিক-পৌর কর্তৃপক্ষের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে কথা শোনা বা না শোনা একে অপরকে দোষারূপে ভর্তুকি হিসেবে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণের।
শহরে বর্তমানে তিন হাজার ব্যাটারিচালিত বৈধ রিকশা থাকলেও অতিরিক্ত আরো পাঁচ হাজারের মত ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা রয়েছে। অন্যদিকে দেড় হাজার বৈধ ইজিবাইকের পাশাপাশি আরো দুই হাজার অবৈধ ইজিবাইক রয়েছে। পাঁচ কিলোমিটারের শহরে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে আট হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন হাজার ইজিবাইক চলাচলের কারণে শহরে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। শহরে এসব বৈধ অবৈধ যানবাহনের চাপে নাকাবন্দী হয়ে এখন জনসাধারণের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি কোনভাবেই সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনী। নাকি সমাধানের পথ থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ সে পথে হাঁটতে চাইছেনা! এমন প্রশ্নই এখন শহরবাসীদের মুখে ঘুরপাক হলেও উভয় কর্তৃপক্ষের কর্ণে বিবাদ ভঞ্জন হচ্ছে না। যার ফলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বাহিনী ট্রাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পৌর কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, শহরে এখন পায়ে চালিত কোন রিকশা নাই। বর্তমানে যেসব লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সবগুলোই পায়ে চালিত রিকশার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। ২০২০ সনে ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক সিন্ডিকেট জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আল মামুন সরকারকে দিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবে ব্যাটারিচালিত দুই হাজার রিকশা ও এক হাজার একশতো ইজিবাইক লাইসেন্স দিয়ে বৈধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ব্যাটারিচালিত রিকশা তিন হাজার, ইজিবাইক এক হাজার একশতো (নয়শতো ইজিবাইক শহরের ভিতরে) দুইশতো ইজিবাইক শহরতলী ইউনিয়ন পরিষদ চালকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। এর পরই যে যার মত করে ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কোটিপতি বণিক শ্রেণির মাঝে লাইসেন্স বাগিয়ে নেয়ার হিড়িক পড়ে।
রিকশা লাইসেন্স ফি এক হাজার টাকা, আবেদন ফি পঞ্চাশ টাকা, কল্যাণ তহবিল পঞ্চাশ টাকা +ভ্যাট ১৫%। ইজিবাইক লাইসেন্স ফি দুই হাজার আটশতো টাকা, আবেদন ফি পঞ্চাশ টাকা, কল্যাণ তহবিল পঞ্চাশ টাকা +ভ্যাট ১৫%।
আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সনে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার উপদ্রব শুরু হয়। কালক্রমে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক শহরের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ালে ২০১৭ সনে সাবেক মেয়র নায়ার কবির রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তখন রিকশা মালিক সিন্ডিকেট পৌর মেয়রের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রিকশা চালকদের দিয়ে শহরে ধর্মঘট ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির তার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে। জেলা শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দ শহরের পরিত্যক্ত পুরাতন কাচারী ভবনে (বর্তমান জেলা মডেল মসজিদ) বসে দলের নেতা কর্মীদেরকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার তালিকা করেন। যার ফলে দেখা যায়, কেউ দেড়শতাধিক রিকশার লাইসেন্স পেয়েছে, কেউ শতাধিক রিকশার লাইসেন্স পেয়েছে, কেউ আশিটি রিকশা লাইসেন্স, কেউ পঞ্চাশটি রিকশারও লাইসেন্স পেয়েছে। এভাবে দলের নেতাকর্মীদেরকে দুই হাজার রিকশার লাইসেন্স ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। বিষয়টি তখন শহরে সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার আরো লাইসেন্স বাড়ানোর প্রস্তাব করেন যা প্রতিজনকে একটি করে আরো এক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও পাঁচশত ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়। যদিও শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সবগুলো লাইসেন্স বাবদ বিশ হাজার থেকে তদোর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছিল।
এসব অনিয়মের কারণে রিকশা চালক এবং যাত্রীদের মাঝে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীরা বলছেন রিকশা চালকেরা নিজেদের খুশিমত ভাড়া হাঁকাচ্ছে, স্বল্প দূরত্বের জায়গায় তারা অধিক হারে ভাড়া নিচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে কোন তদারকি না থাকার অভিযোগ তোলেন যাত্রীরা।
রিকশা চালকরা বলেন, রিকশার মালিকপক্ষ প্রতিটি রিকশা থেকে দৈনিক চারশতো থেকে সাড়ে চারশতো টাকা হাড়ে ভাড়া আদায় করে। তাছাড়া এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বগতি হয়েছে যা জীবন ধারণের মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পৌর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভাড়া তালিকা থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে তারা বাধ্য হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায় অনেকেরই লাইসেন্স আছে, রিকশা নেই, আবার কারো রিকশা আছে লাইসেন্স নেই। সেসব লাইসেন্সের মালিকেরা অবৈধ রিকশার মালিকদের কাছে লাইসেন্স প্রতি দৈনিক হারে ভাড়া দেয়। সকালে একজনের কাছে ভাড়া দিলে বিকালে অন্যজনের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। লাইসেন্সের জন্য একরকম ভাড়া আবার চালকদের জন্য এপ্রোনেরও আলাদা ভাড়া দিচ্ছে গাড়িবিহীন লাইসেন্সের মালিকেরা। কোন কোন মালিক তার নামে, তার স্ত্রীর নামে, তার ছেলে ও মেয়ের নামে একাধিক লাইসেন্স করে রেখেছে।
পৌরসভার লাইসেন্স ইনিসপেক্টর আল মাসাদ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যানজট নিরসনের জন্য ইজিবাইক চলাচলের জন্য ৭টি রাস্তা বিভক্ত করে দেয়া হয়েছে। ১. ঘাটুরা থেকে কাউতলী মোড়, ২. ভাদুঘর থেকে ফকিরাপুল মোড়, ৩. শিমরাইলকান্দি থেকে কালিবাড়ি মোড়, ৪. গোকর্ণঘাট থেকে কালিবাড়ি মোড়, ৫. দাড়িয়াপুর পৈরতলা থেকে মঠের গোড়া মোড়, পীরবাড়ি থেকে পুরাতন জেলখানা মোড় ও ৭. বিরাসার মোড় থেকে টেঙ্কেরপাড় মোড় পর্যন্ত। তিনি বলেন, ২০১০ সনের পূর্বে এরচেয়েও বেশি পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স ছিল। কিন্তু পায়ে চালিত রিকশা চালাতে কেউ চায় না বলে শহরে রিকশার চাপ কম ছিল। যখনই ব্যাটারিচালিত রিকশার লাইসেন্স দেয়ার নির্দেশ আসছে তখন থেকে নতুন করে লাইসেন্স নেয়ার হিড়িক পড়ে। পুরাতন লাইসেন্সধারীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আমাদের দপ্তরে ভিড় জমায়। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক নেতাদের চাপে কোটিপতিরাও এসে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিংবা ইজিবাইকের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যার ফলে দেখা গেছে একজন শতাধিকেরও বেশি রিকশার লাইসেন্স পেয়েছে, আবার কেউ কেউ একটারও লাইসেন্স পায়নি। আমরা একাধিকবার চেষ্টা করেছি এসব লাইসেন্স বিভিন্ন চালকদের কাছে বিতরণ করার জন্য, কিন্তু রাজনৈতিক চাপে তা আর হয়ে উঠেনি।
কারা কারা লাইসেন্স পেয়েছে তার তথ্য চাইলে তালিকা তৈরি না থাকার কারণে তিনি দিতে পারেননি। তবে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে আবেদন করার পর তালিকা তৈরি করে আমাকে দেয়া হয়। তালিকানুযায়ী দেখা যায়, লাইসেন্স বিতরণে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে, রয়েছে বৈষম্যও।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম বলেন, নব্বই ভাগ রিকশা শ্রমিকেরা লাইসেন্স পায়নি, রিকশার লাইসেন্স পেয়েছে বণিক শ্রেণির সিন্ডিকেট। গরীব মানুষ এক পক্ষের আর ধনী মানুষ আরেক পক্ষের। আমরা বিষয়টি নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করেছি, আমরা ২০২০ সন থেকে এই পর্যন্ত তিন জন জেলা প্রশাসকের সাথে পাঁচ থেকে সাতবার দেখা করে স্মারকলিপিও দিয়েছি। আমরা এর প্রতিকার চেয়ে পৌরসভা ভবন একদিনের জন্য ঘেরাও কর্মসূচিও দিয়েছি শুধুমাত্র লাইসেন্স নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য। পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতিবাদের পরে আরো হাজার খানেক রিকশার লাইসেন্স দিয়েছিল। তাদের কাছে আমাদের দাবি ছিল প্রতিজনকে একটি করে লাইসেন্স দেয়ার জন্য কিন্তু তারা তা করেনি। সেখানেও তারা একেক জনকে দশটা বিশটা লাইসেন্স দিয়েছে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, প্রথম পর্যায়ে যারা লাইসেন্স পেয়েছিল তারা একেকটি লাইসেন্স দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্তও বিক্রি করে দিয়েছে। যাদের রিকশা নেই কিন্তু লাইসেন্স আছে তারা একটা লাইসেন্স বছর প্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকাও ভাড়া দিয়ে থাকে। যার ফলে মূল শ্রমিকেরা রিকশার মালিক হলেও লাইসেন্স মালিকদের কাছ থেকে লাইসেন্স এবং এপ্রোন ভাড়া নিতে হয়। রিকশায় উঠলেই সর্বনিম্ন ত্রিশ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এতে করে রিকশা শ্রমিক ও যাত্রীদের মাঝে প্রতিদিনই ঝগড়া সৃষ্টি হচ্ছে। এর জন্য পৌরসভা, জেলা প্রশাসক এবং আইনশৃংখলা বাহিনীকে দায়ী করেছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, রিকশার লাইসেন্স প্লেটটি দুর্নীতি করার জন্য সহজ পন্থা। এটাকে একাধিক কপি করে একাধিক লাইসেন্স বিহীন অবৈধ রিকশায় লাগানো হয়। একজন রিকশা চালক দৈনিক হাজার টাকা আয় করে তিনশতো থেকে চারশতো টাকা ঘরে নিতে পারে। রিকশা শ্রমিক নির্ধারিত ভাড়া থেকে বেশি নেয় কিন্তু তবুও তাদের দুর্দশা লেগেই থাকে। তিনি দাবি করে বলেন, সিন্ডিকেট রিকশার লাইসেন্স বাতিল করে শ্রমিকদেরকে রিকশার লাইসেন্স দেয়া হলে রিকশা শ্রমিকদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে। বর্তমানে পায়ে চালিত রিকশা মানে একজন আরেকজনকে কাঁধে করে নেয়ার সমান যা খুবই অমানবিক। তাছাড়া বর্তমানে শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ শ্রমিকেরাও ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাতে পারে। তবে তিনি দাবি করে বলেন, ইঞ্জিনচালিত রিকশা লাইসেন্স দেয়ার ক্ষমতা শুধুমাত্র বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক আবদুন নূর বলেন, এসব অনিয়মের বিষয় নিয়ে শহরে দীর্ঘদিন থেকেই আলোচনা সমালোচনা চলছে। এটা মূলত রাজনৈতিক এবং পৌর মেয়রের স্বজনপ্রীতির কারণে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যার ফলে একেকজন পঞ্চাশ/ষাট/সত্তর/আশি/নব্বই ও শতাধিকেরও বেশি রিকশার লাইসেন্স পেয়েছে। এতে করে সাধারণ রিকশার মালিকরা লাইসেন্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একজন শতাধিক রিকশার লাইসেন্সের মালিক, কেউ পঞ্চাশটি রিকশার লাইসেন্সের মালিক, আবার কেউ রিকশা থাকা সত্ত্বেও লাইসেন্স না পাওয়াটাই মূলত বৈষম্য। রিকশা মালিক সিন্ডিকেট বাতিল করে প্রকৃত রিকশার শ্রমিকদেরকে সমতার ভিত্তিতে লাইসেন্স দেয়ার আহবান জানান তিনি। এসব বিষয়ে প্রতিকারের পদক্ষেপ নিলেও কোন সুরাহা করতে না পারার ব্যর্থতা প্রকাশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী কাউছার আহমেদ জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা রাজনৈতিক নেতা ও জেলা প্রশাসকের সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চাপের কারণে কোন সমাধান করতে পারিনি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় রিকশা ও ইজিবাইক যাতায়াতের জন্য আমরা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছি, তাও রিকশা শ্রমিকরা মানছেনা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আসলে আমরা রিকশার মালিককে চিঠির মাধ্যমে তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করি। রিকশা মালিকদের কাছে প্রত্যাশিত উত্তর না পেলে আমরা সেসব রিকশার লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক উপ পরিচালক (উপসচিব) স্থানীয় সরকার রুহুল আমিন বলেন, ৫ আগস্টের পর মেয়র পদটি বাতিল করা হলে আমাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রিকশা লাইসেন্সটি খুবই জটিল, এই কাজটি নির্বাচিত সরকারের। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, আমারা এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে রয়েছি। আমাদের অনেক কিছুই সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেসব বিষয় নিয়ে জেলার নাগরিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে আলোচনা পর্যালোচনা করে একটা সমতার ভিত্তিতে সমাধান করার।