নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভারতের সাথে সম্পাদিত সীমান্ত সংক্রান্ত সকল ধরনের অসম চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা বুধবার ২৯ জানুয়ারি দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আগামী ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের নয়াদিল্লীতে ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য সীমান্ত সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ২০১১ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের তিন বিঘা ও দহগ্রাম করিডোর নিয়ে একটি অসম চুক্তি হয়েছে। তাছাড়া মহিষাশন (ভারত)-কুলাউড়া (বাংলাদেশ) আন্তঃদেশীয় রেলপথের কুলাউড়া রেল স্টেশন সীমান্ত থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত। আমরা তাদেরকে আমাদের বর্ডারের তিন কিলোমিটার ভিতরে আসতে দেবো না। সেখানে সীমান্তের সন্নিকটে কাস্টমস-সহ একটা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট নির্মাণের প্রস্তাব করা হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো কাজ করতে হলে দুই পক্ষের অনুমতি নিতে হয়৷ এগুলো একপক্ষে করার নিয়ম নাই৷ উন্নয়নমূলকভাবে একটা মসজিদ বা মন্দির করতে হলে দুই দেশের সম্মতি নেয়া প্রয়োজন৷ আগামীতে কিছু করতে হলে যেন তারা সম্মতি নেয় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হবে৷
ভারতের সাথে সম্পর্কের আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ কোনো ছাড় দিবে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শুধু ছাড় দিয়ে কিন্তু আস্থা বাড়ানো যায় না। আলোচনার মাধ্যমেও আস্থা বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয়রা অনেক সময় ফেন্সিডিল-সহ বিভিন্ন মাদক তৈরি করে আমাদের দেশে ঢুকিয়ে দেয় ৷ যদিও তারা বলে ফেন্সিডিলগুলো ওষুধ হিসেবে তৈরি করছে। আসলে এটা মাদক হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বৈঠকে ভারতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা সংবাদ প্রচার বন্ধের বিষয়েও আলোচনা করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের গণমাধ্যম ও দেশের জনগণ খুবই সোচ্চার।
৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক/ভারতীয় দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক সীমান্ত হত্যা/সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বা কাউকে আহত করা বন্ধ করা; বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া বা আটক করা বন্ধ করা; বিএসএফ বা ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন বা অবৈধ পারাপার অথবা অনুপ্রবেশ বন্ধ; ভারত হতে বাংলাদেশে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক দ্রব্য চোরাচালান প্রতিরোধ; আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে বর্জ্য পানি প্রবাহিত হয় এরূপ চারটি খালে পানি শোধনাগার স্থাপন; বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী নদীসমূহের পানির সুষম বণ্টন, নদী হতে পানি উত্তোলন, পানি চুক্তি বাস্তবায়ন এবং রহিমপুর খালের মুখ পুনঃউন্মুক্তকরণ;
বিতর্কিত মুহুরীর চর এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিভিন্ন এলাকায় বর্ডার পিলার স্থাপনের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা; সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘কার্যকর সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন; দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।