মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হিসেবে মোংলা বন্দর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বহুলাংশে পরিচালিত হয়। দিনদিন বন্দরের কার্যক্রমের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি এর আশেপাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বন্দরের এই অগ্রযাত্রার সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা বন্দর ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন-এর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিগত আওয়ামীলীগ এর আমল হতে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বন্দর থেকে অবৈধ মালামাল পাচার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং বন্দরের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করছেন।
অভিযোগের সারসংক্ষেপঃ অবৈধ মালামাল পাচার ও দুর্নীতি। আওয়ামী পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের ছত্র ছায়ায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বন্দর থেকে পণ্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে লিয়াকত হোসেন লিটনের বিরুদ্ধে। যৌথ বাহিনীর কাছে বন্দরের ব্যবহারকারীরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, যেখানে লিয়াকতের বিরুদ্ধে একাধিক পাচারের প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে।
কাস্টমস এসোসিয়েশনে অনিয়ম ও দুর্নীতিঃ লিয়াকত হোসেন লিটন রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ৩৫ জন সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছ থেকে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার নাম করে ৬৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
ভয়ভীতি ও দমননীতিঃ কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন লিয়াকত। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অবৈধ সম্পদের পাহাড়ঃ বন্দরের দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন লিয়াকত। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে, “মোংলা বন্দর আমার বাবার সম্পত্তি।
এ ধরনের দুর্নীতি শুধু বন্দর নয়, বরং দেশের অর্থনীতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। সুতরাং, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সর্ব সাধারনের দাবি দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করা।দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।বন্দরের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষায় নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা।সেই সাথে মোংলা বন্দর হোক দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ বাণিজ্যের প্রতীক। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে এই বন্দরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।