রংপুরে ইউএনওর দুর্নীতি ঢাকতে ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

রংপুর প্রতিনিধিঃ

রংপুরের পীরগাছায় তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। গত ৩০ মার্চ রবিবার কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নেছার আহম্মেদ মামলাটি করেন। অভিযোগ উঠেছে, নেছারকে দিয়ে মামলাটি করান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন ।

আসামিরা হলেন একাত্তর টেলিভিশন ও দৈনিক সংবাদের পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল কুদ্দুস সরকার, দৈনিক নতুন স্বপ্নের বার্তা সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের কন্ঠের রংপুর প্রতিনিধি, হারুন অর রশিদ বাবু এবং দৈনিক গণকন্ঠের পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শাহীন মির্জা সুমন। এ ছাড়াও ভিজিএফ বঞ্চিত আজগার আলী ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে।মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঈদের আগে কল্যাণী ইউনিয়নে সরকারিভাবে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু কয়েকজন সাংবাদিক ও স্থানীয় লোকজন শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে একটি ভিডিও ধারণ করেন, যা ইউএনও, ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক এবং ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বাদীর দাবি, তিনি ইউএনও কার্যালয়ে আইনি সহায়তার জন্য যাওয়ার পথে অভিযুক্ত সাংবাদিকরা পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তার ওপর আক্রমণ চালানো হয়। পরে ইউএনও নাজমুল হক সুমন ও ইউপি প্রশাসক ফারুকুজ্জামান ডাকুয়াকে বিষয়টি অবহিত করে মামলা করা হয়। কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের স্থলে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া। অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইউএনওর নাম ব্যবহার করে ভিজিএফের স্লিপ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভাগ করে দেন। এ ঘটনায় ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য ও সাংবাদিক শাহীন মির্জা সুমন।সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস সরকার বলেন, ‘ইউএনও নাজমুল হক সুমন পীরগাছায় যোগদানের পর থেকেই একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন। আমরা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি ক্ষিপ্ত ছিলেন।আমি তথ্য অধিকার আইনে একাধিক ভুয়া প্রকল্পের তথ্য চেয়েছি বলেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের নামে মামলা করেন।

‘ইউএনও নাজমুল হক সুমনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে সাংবাদিক হারুন অর রশিদ বাবু বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করেছি। সর্বশেষ, কল্যাণী ইউনিয়নে ভিজিএফ বিতরণে অনিয়মের খবর প্রকাশ করি। এই ঘটনায় স্থানীয় ভুক্তভোগীরা ইউএনও ও ইউপি প্রশাসকের বিরুদ্ধে জুতা ও ঝাড়ু মিছিল বের করে। আমি সেই মিছিলের লাইভ সম্প্রচার করি। এরপরই ইউএনও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করালেন। ইউএনও মুলত আমাদের নামে মামলা দিয়ে তার অপকর্ম আড়ালের চেষ্টা করছেন। মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে চাচ্ছেন কিন্তু আমরা তা হতে দিবনা। আমাদের ফাঁশি হলেও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে লড়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

সাংবাদিক শাহীন মির্জা সুমন বলেন, ইউএনও মামলার বাদী করেছেন নেছারকে। আর কথিত সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াবা কারবারি রাজীব মুন্সিকে সাক্ষী করা হয়েছে। ইউএনও নাজমুল হক সুমন একজন চিহ্নিত লুটেরা, ইতিপূর্বে তার দপ্তরে অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছি তিনি সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যার্থ হয়েছে।

এবিষয়ে, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে একটি  বিবৃতি দিয়েছে। প্রকাশিত বিবৃতি হুবহু তুলে ধরা হলো। “ভিজিএফ এর চাল মাস্টার রোলে থাকা দুঃস্থদের না দিয়ে সামর্থ্যবানদের দেয়ার খবর পরিবেশন করায় রংপুরের পীরগাছার তিন সাংবাদিকের নামে সাইবার সিকিউরিটি  নিরাপত্তা আইন ও চাঁদাবাজির মামলা দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব  ও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজে। আমরা অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি। এই ঘটনার সাথে জড়িত এবং ইন্ধনদাতা সরকারি কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের আবেদন করছি। অন্তর্বর্তী কালীন সরকার সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল এবং এই আইনে মামলা না দেয়ার নির্দেশনা দিলেও যারা এই মামলা দপয়া ও নেয়ার সাথে জড়িত  তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি নেছার আহমেদ বলেন, চাদা দাবির বিষয়টি মামলার সুবিধার্থে দেয়া হয়েছে। ইউএনও  নাজমুল হক সুমন ও কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ডাকুয়ার চাপাচাপিতে তিনি বাদী হয়েছে।  সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ বাবু এবং শাহীন মির্জা সুমন। সম্পর্কে তার ভাতিজা হন বলেও জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইউপি সদস্য বলেন,  ইউএনও নাজমুল হক সুমনের একক সিদ্ধান্তে এই মামলা হয়েছে।

ইউপি প্রশাসক ডাকুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ইউএনও সুমনের সঙ্গেও মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। এবিষয়ে পীরগাছা থানার অফিসার ইনর্চাজ নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।

এবিষয়ে জেলা রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালকে একাধিকবার  ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement