তৌকির আহাম্মেদ,সাভারঃ
সাভারে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধ্বসের ১ যুগ পুর্তিতে রানা প্লাজা ভবনধসের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু হয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এক যুগেও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শেষ হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ১২ বছর পূর্ণ হলেও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি। এটাকে দুর্ঘটনা বললে ভুল হবে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রয়োজনীয় সহায়তা, পুনর্বাসন এবং আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দিতে হবে। ভবন মালিক এক যুগ ধরে জেলে আছেন, বিচারকাজ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু কারখানার মালিকেরা দিব্যি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের এক যুগেও জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারী শ্রমিক শিলা বেগম। তিনি বলেন, ২৩ তারিখ বিল্ডিংয়ে ফাটল দেখা দিলে একজন ইঞ্জিনিয়ার এসে বলেন, ‘ভবন ঝুঁকিপূর্ণ’। পরে ব্যানার ও তালা লাগিয়ে দিলেও রানা এবং গার্মেন্টস মালিকরা জোর করে ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। তাদের কারণে এতোগুলো মানুষ প্রাণ হারাল, পঙ্গু হলো কিন্তু তাদের কোন শাস্তি হলোনা।
সেদিন ভবন ধ্বসের ঘটনায় শিলার ডান হাতের রগ কেটে যায়, পেটে ভিম পড়ে নাড়িভুড়ি বের হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে মেরুদণ্ড। এখন অন্যের সহায়তায় শত যন্ত্রণা নিয়ে কোনোমতে বেঁচে থাকলেও অর্থের অভাবে নিজের চিকিৎসা কিংবা একমাত্র মেয়ের পড়াশোনা কোনটাই করাতে পারছেননা। মেধাবী মেয়ে তানজিলা আক্তার ক্লাস ফাইভে, এইটে গোল্ডেন এ প্লাস, এসএসসিতে এ, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বর্তমানে বরিশাল মহিলা কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়লেও টাকার অভাবে পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “নিজে তো চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পড়ে আছি। খেয়ে না খেয়ে সময় যাচ্ছে। অনেক স্বপ্ন ছিলো, মেয়েটা বড় অফিসার হবে তাও শেষ হয়ে গেল। কেউ সহযোগিতা করলে মেয়েটাকে পড়ালেখা করাতে পারতাম।
ক্ষুব্ধ শিলা জানায়, এক যুগ ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি, কেউ কথা শোনে না। সরকার আমাদেরকে পুনর্বাসন করে কিছু করে খাওয়ার ব্যাবস্থা করে না দিলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশনে বসবো বলে হুশিায়ারি দেন।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম ইসমাইল বলেন, রানা প্লাজার জায়গা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে পুনর্বাসন, আহতদের সুচিকিৎসা, সোহেল রানাসহ দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
সকাল থেকে রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।