রূপগঞ্জের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, উদ্ধার হয়নি বিভিন্ন সময়ে শোডাউন দেয়া অস্ত্র

মোঃআবু কাওছার মিঠু , রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া, ভুলতা, মুড়াপাড়া, কাঞ্চন, তারাবো, ভোলাবো, দাউদপুর, গোলাকান্দাইল, রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় বিগত সরকারের আমলে মিটিং মিছিল বা বিভিন্ন শোডাউন এর সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় নিজেদের আদিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পিস্তলসহ বিভিন্ন দেশীয়  অস্ত্রের মহড়া দিত।

এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানী দখলে রাখতে, ও দলীয় নেতাদের কব্জায় রাখতে আওয়ামিলীগের দলে দলে ভাগ হয়ে যেসব অস্ত্র মজুদ করে আধিপত্য বিস্তার করেছে।  নেতা কর্মীরা পালিয়ে বেড়ালেও সেগুলো কারো কাছে অবশ্যই রয়ে গেছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসন তৎপর না হলে এগুলো যে কোন সময় হাত বদল হয়ে দূস্কৃতিকারীদের হাতে পড়তে পারে। আবারও অশান্ত হতে পারে রূপগঞ্জ।  এজন্য আতঙ্কে সাধারন ও সুশীল সমাজের মানুষ।

দাউদপুর ইউনিয়নের কৃষক শরাফত বেপারী বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রূপগঞ্জে একটা উত্তেজনা কাজ করেছে মানুষের মধ্যে। সাবেক সাংসদ গাজী গোলাম দস্তগীর আওয়ামিলীগের হয়ে নির্বাচন করলেও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়াও ছিলেন একই দলের প্রার্থী তবে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচন পরবর্তী গাজী গোলাম দস্তগীর  নির্বাচিত হলে শাজাহান সমর্থিত সকল নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি মারধর ও দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় এ সময় এক থেকে দেড়শ শত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া চালায় দুর্বৃত্তরা।  দাউদপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, এসব গাজী গোলাম দস্তগীরের পালিত সন্ত্রাসী তারাই এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ জালিয়ে দিয়েছে।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌরআওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল কলি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লিটু ও তাদের প্রতিদ্বন্দি আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি কাঞ্চন পৌর মেয়র  মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিকের পরিবারে সদস্যদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় ঝগড়া লেগেই থাকতো। গত বছর ৪ আগে অস্ত্র উদ্ধারে নামে পুলিশ। কেন্দুয়া হাটের পাশে মসজিদের ছাদ থেকে উদ্ধার হয় শতাধিক দেশীয় অস্ত্র, কিন্তু গোলাম রসুল কলি ও লিটুর কাছ থেকে উদ্ধার হয়নী দুই শতাধিক অস্ত্র ।

ভোলাব ইউনিয়নেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ভোলাবো ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কাউসার ভুঁইয়া ও কাঞ্চন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাঞ্চন পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ডের কমিশনার মনির হোসেন এর মধ্যে ইটভাটা মাটিকাটা নিয়ে বিভিন্ন সময় লেগে থাকত ঝগড়া এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে চলতে শোডাউন এসব অস্ত্র নিয়ে এখন আতঙ্কিত সাধারন মানুষ। গত দুই মাস আগে কমিশনার পনিরের ভাই শহিদুল পিকনিকের ভোটে আক্রমণ করে একজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে পরে তা টাকার বিনিময়ের রফাদফা করে ও বাদীপক্ষকে মামলা না করার জন্য হুমকি প্রদান করে। শুধু তাই নয় ৫ই আগষ্ট বৈশম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনের পর শতাধিক অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভাংঙ্গা হয় ডাঃ কবির হোসেনের অফিসও।

শুধু তাই নয় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর মোহনায় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। এটি কায়েত পারার মাদকের স্পট বলে পরিচিত। সেখানে মাদক বেচাকেনা নিয়ে বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তার ও ঝগড়া লেগেই থাকে। প্রায়ই শোনা যায় বিদেশি ও দেশী অস্ত্রের ঝঞ্জনানি। চনপাড়ায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে অনেক। একদিকে পুলিশ প্রবেশ করলে আসামিরা অন্য দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। কায়েতপাড়ার ডন খ্যাত আন্ডা রফিক ও মোশারফ বাহীনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো, রূপগঞ্জ থানা পুলিশের একটা আতঙ্কের জায়গা হয়ে দাড়িয়েছিল নাওড়া গ্রাম। সেখানে সব সময় অস্ত্রের মহড়া চলতো সংঘর্ষ চলতো মাসের এ মাথায় ও মাথায়।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত দেড় দশকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক ডজন খুন ও জখম হয়। বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে এসব তথ্য উপস্থাপন হলেও অস্ত্র উদ্ধারে নেই তেমন কোন তৎপরতা। এসব অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসন কাজ না করলে আবারও অশান্ত হতে পারে রূপগঞ্জ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *