মোঃ মহিউদ্দীন, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সরকারি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ আ কা ম মামুনুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বুধবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলে মানববন্ধন পালন করেছে।
মানববন্ধনে অংগ্রহণকারীরা বলেন, তিনি অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার শুরু থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নামক ব্যাধিতে মারাত্মকভাবে জড়িয়ে পড়েন। কলেজটি জাতীয়করণ ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয় তার নিজের নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের প্রশ্ন উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ভাটই বাজার এলাকায় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশেই কলেজটির অবস্থান। অধ্যক্ষ মামুনুর রহমান প্রায়ই কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। তিনি তার ইচ্ছামত উপস্থিত হয়ে বিগত দিনের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। বিগত দিনে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় তিনি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের দীর্ঘদিন জিম্মি করে রাখায় এতো অনিয়মের পরেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। বর্তমান ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে রূপ পরিবর্তন করে স্থানীয় দলের নেতাদের সাথে আতাত করে নতুন বুদ্ধি আটছেন। এদিকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতায় এইচএসসি কম্পার্টমেন্টাল-১৯৮৯, আবার পাস কোর্স থেকে পাস। নিয়োগ বিধিতে আছে, যদি কেউ পাস কোর্স থেকে পাস করে তাহলে যে কোন একটিতে ১ম শ্রেনি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তার শিক্ষা জীবনে কোন ১ম শ্রেণী না থাকলেও অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পান। এত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিভাবে নিয়োগ পেল তা নিয়েও কথা উঠেছে।
আরো জানা যায়,কলেজটি ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে জাতীয়করণ হয়। এরপর ব্যাকডেটে নিয়োগের মহাৎসোব শুরু হয়ে যায়। ব্যাকডেটে বিভিন্ন সময়ে ২৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভূয়া সার্কুলারের মাধ্যমে ২০১৯ সালে মৃত ও অন্যত্র চলে যাওয়া ডিগ্রী শিক্ষকের পদে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে অবৈধভাবে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও ওই কলেজের অনার্স সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাসিমা খাতুনের স্বপদ থেকে সরিয়ে তাকে অফিস সহকারীতে নিয়োগ দিয়ে উক্ত পদে হাফিজুর রহমানকে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়ে ২২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। শুধু হাফিজুর রহমানই নন অনার্সে এমন অনেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও সাবেক সভাপতির (আব্দুল হাই এমপি) স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ টিউশন ফিসের ১২ লক্ষ টাকা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করেন। করোনাকালীন সময়ে সরকার থেকে ফেরতকৃত এইচএসসি শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র ফির ৪০০ জনের ৪০০ টাকা করে রেখে দিয়ে মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কলেজ জাতীয়করণের পরে ফান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও ৬০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ব্যক্তিগত ধারের টাকা কলেজ ফান্ড থেকে পরিশোধ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, মূল কপির উপর টেম্পারিং করে সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ২০২৩ সালে ২৯ জনকে অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন। ২২ আগস্ট ২০১৬ সালে দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার ১৪ জন নিয়োগের সার্কুলারটি জাল করে একই ডেটে সোনালী খবর পত্রিকায় টেম্পারিং করে ১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১০ আগস্ট ২০১৭ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার নিয়োগের সার্কুলারটি জাল করে একই ডেটে একই পত্রিকা টেম্পারিং করে ১২ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োাগ দেয়া হয়েছে। ১০ আগস্ট ২০১৭ দৈনিক খবর পত্র পত্রিকার ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলারটি জাল করে একই ডেটে সোনালী খবর পত্রিকা টেম্পারিং করে ৮ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে। ১০ জানুয়ারি ২০১৫ দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের কোন সার্কুলার না থাকলেও তিনি ওই পত্রিকার টেম্পারিং করে ১১ জন শিক্ষক ও তৃতীয় শ্রেণির ৭ জনকে নিয়োগ দেন। যা মূল পত্রিকার সাথে কোন মিল নেই।
দৈনিক সোনালী খবর পত্রিকার ভুয়া সার্কুলার দেখিয়ে একজন কম্পিউটার অপারেটর একজন স্টোরকিপার একজন এমএলএসএস নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার কোন সার্কুলারই নেই ঐ পত্রিকায়। এভাবে অবৈধ নিয়োগের মাধ্যম ২ থেকে ৩ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্য করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও এলাকাবাসী। এবিষয়ে সরকারি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কলেজে অধ্যক্ষ আ কা ম মামুনুর রহমান মুঠো ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।