বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চুন্নুর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের অর্ধ কোটি টাকার জমি লিখে নিতে ও দেশ ছাড়া করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি পরিবারের কর্তাকে ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী খোকন চন্দ্র মন্ডল।
তার দাবি, বিএনপি নেতার হুমকিতে বর্তমানে এলাকায়ও যেতে পারছেন না তিনি। ভূক্তভোগী খোকন মন্ডল কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ এলাকার লক্ষন চন্দ্র মন্ডলের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার দাদা পরেশ চন্দ্র মন্ডলের নামে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর জেএলভূক্ত নীলগঞ্জ মৌজার ১৪৫ নম্বর আর.এস খতিয়ান ও ১৭৩ নম্বর এস.এ খতিয়ানে তিন একর সাড়ে ৭১ শতাংশ জমি রয়েছে।
পৈত্রিক সূত্রে ওই জমির মালিক হিসাবে আমরা দুই ভাই খোকন চন্দ্র মন্ডল ও দুলাল চন্দ্র মন্ডল ভোগদখলে রয়েছি। যার বি.এস নম্বর ১১১১। এমনকি ওই জমির হাল দাখিলাসহ অন্যান্য সকল কাগজপত্র আমাদের নামে রয়েছে। সেই জমি থেকে ১২০ শতাংশ জমি লিখে নেওয়ার জন্য নানা কৌশল এবং হুমকি দিচ্ছেন কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চুন্নু।
খোকন চন্দ্র মন্ডল বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্য একটি হিন্দু পরিবারকে আমার সম্পত্তির ভাগিদার বানিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে হয়রানী করার জন্য একাধিক মামলাও করেছে। প্রতিটি মামলাই আমার পক্ষে রায় হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর আমি বুঝতে পারি আমার এবিষয়টি নিয়ে কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চুন্নু তালুকদার আগে থেকেই কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি তিন দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আমার সমস্ত কাগজপত্র নিজের কব্জায় নিয়ে নেন।
তিনদিন পর তার কাছে গেলে ফয়সালা দেয়ার পরিবর্তে আমার কাছে স্থানীয় মাপে ৪০ কড়া তথা ১২০ শতাংশ জমি তার নামে লিখে দেয়ার কথা বলেন বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান চুন্নু। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫০ লক্ষাধীক টাকা। অন্যথায় ওই জমি আমি ভোগ করতে পারবো না বলে হুমকী ও হুঁশিয়ারী দেয়।
খোকন চন্দ্র মন্ডল আরও অভিযোগ করেন, ‘তার নামে জমি লিখে দিতে রাজি না হলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য দেবাশীষ সিকদার কালাকে দিয়ে আমাকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমনকি গত ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাকে ডেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকী ও ভয়ভীতি দেখায়। সে আমাকে দেশ ত্যাগ করে ভারত যাওয়ার হুমকী দেয়। তার ভয়ে আমি ও আমার পরিবার এখন ভীতিগ্রন্থ অবস্থায় রয়েছি।
খোকন দাবি করেন, তিনি বিএনপির একজন একনিষ্ট কর্মী। আওয়ামী লীগের আমলে অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অথচ গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকে আমার ওপর হামলা ও হয়রানীর পরিমাণ বেড়েই চলছে। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনয় ভূগছি। ফলে নিজ এলাকায় যেতে না পেরে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে দাবি করেন ভূক্তভোগী কলাপাড়া উপজেলা হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য খোকন চন্দ্র মন্ডল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চুন্নু।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি আমার সাথে যায় না। আমার ব্যাপারে আপনাদের তেমন কোনো ধারণা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ওই জমির ফয়সালা করেছিলেন নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন কবির। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিলে খোকন চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানি মামলা করার কথা বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি সভাপতি আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমি শ্যামের কূলেও নেই, রাধার কূলেও নেই। আপনারা সংবাদ করবেন, তদন্ত করে দেখুন, কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান চুন্নু তালুকদার আসলেই জড়িত রয়েছে কিনা।