সমাবেশে যোগ দিতে পারলেই মিলবে লাখ লাখ টাকা! ছাত্র  ও জনতা মিলে আটক করেছে ৮ বাস

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

আশরাফুল আলম  (স্টাফ রিপোর্টার) কিশোরগঞ্জ :

 

কিশোরগঞ্জের নিকলী ও বাজিতপুর হতে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া ৮টি যাত্রীবাহী বাসই বাজিতপুর উপজেলাধীন হিলোচিয়া টু ঢাকা ভায়া সরারচর রাস্তায় আটক করে স্থানীয় ছাত্রজনতা ও গ্রামবাসী মিলে। অপরদিকে বাকী আরও ৪টি বাস ঢাকায় সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে নামার পরপরই সেবা সদস্যরা আটক করেছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে পৃর্বপরিকল্পিত নীল নকশা অনুযায়ী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের উদ্যেশ্যে যোগ দিলেই মিলবে শর্তসাপেক্ষে লাখ লাখ টাকা। স্থানীয় অসংখ্য নারী যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদেরকে পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকায় একটি সংস্থার মাধ্যমে ট্রেনিং শেষে সুদ বিহীন সর্বনিম্ন লাখ টাকা। প্রয়োজনে শর্তানুযায়ী টাকার পরিমাণ অনেক বেশি পর্যন্ত দিবে বলে প্রলোভনে ফেলে একটি চক্র। তবে এ চক্রের পিছনে কি উদ্দেশ্যে ছিল যাত্রীরা বলতে নারাজ। যাত্রীদের অনেকের হাতে ছিল আ.ব.ম মোস্তাফা আমিন আহ্বায়ক অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামের একটি ছবি সম্বলিত ছোট লিফলেট। ব্যানারে লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করবো বিনা সুদে পুঁজি দেবো এই ছিল প্রতিপাদ্য বিষয়।

যাত্রীদের ভাষ্য এলাকার স্থানীয় নারীর মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্যে জনপ্রতি অগ্রীম ৬০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয়। অসৎ উদ্দেশ্যের কথা তাদের জানা ছিলো না। এসবের জন্য অন্যতম কে বা কারা দায়ী এই কথা স্থানীয় নারীরা এখনো পর্যন্ত সঠিকভাবে জানেননি বলে দাবি তোলেন।

এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে আ’লীগ অসংখ্য নেতাকর্মীদের সাথে দফায় দফায় মুঠোফোনে কথা হলেও তারা এই পরিকল্পনার বিষয়ে কিছুই জানেননি বলেও দাবি তোলেন।

নিকলী উপজেলার বদ্বীপ ছাতিরচর গ্রামে গেলে ফেরি নৌমাঝি থেকে শুরু করে নৌঘাটের অসংখ্য লোকের মুখে একটাই ভাষ্য সকালের দিকে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮শ’ নারীকে পার হতে দেখা গেছে বাসে করে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তাদের অপেক্ষায় ছিল বাস নদীর ওপারে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি শামসুজ্জামান চৌধুরী ওরফে ইয়ার খাঁনের ভাষ্য তিনি নিয়মিত এলাকায় থাকলেও এই পরিকল্পনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে ফোনে খবর পেয়ে নৌ ঘাটে গেলে নারীদের ভীড়ের দৃশ্য দেখতে পান বলে স্বীকার করেন।

এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে এই নীল নকশার নেপথ্যে নায়ক উপর মহল থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত জড়িত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় নারীরা লিড দিয়েছে। ছাতিরচর এলাকা ঘুরে জানা গেছে এই গ্রামের দক্ষিণ হাটির রমজান আলীর পুত্রবধূ মোকাররমের স্ত্রী মৌসুমি এই এখানকার ৭ থেকে ৮ শত নারীকে ঋণের কথা বলে এভাবে ম্যানেজ করে। মৌসুমীর শাশুড়ি জুহরার ভাষ্য মৌসুমির বড় বোন জামাতা কুলিয়ারচর উপজেলার বাজরা এলাকার মাসুকের ছেলে মাসুদ টাকার লোভ দেখিয়ে এলাকার অসংখ্য নারীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এছাড়াও হিলোচিয়া ইউনিয়নের অসংখ্য নারীকেও একই কৌশলে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ২৪ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় বাজিতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও শতাধিক নারী পুরুষ নিয়ে ৪টি বাস ঢাকায় যায়। রাতে ঢাকা অবস্থান কালে ছাত্র জনতার হাতে আটকও হন তারা ।

পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন সূত্র।

নিকলী ও বাজিতপুরের বেশ কিছু নারী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে গিয়েছেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনুসের কাছে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবনা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ঘটনার আগের দিন রাতে। ওই টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে প্রত্যেক আবেদনকারীকে এক লাখ টাকা থেকে ১কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে বলে ভূল তথ্য উপস্থাপন করেন তারা। তাছাড়া দেশের ৬৪ জেলা থেকেই লোকজন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে যোগদান করবে বলে তথ্য দেন।

ছাতিরচর এলাকার নামা বাজারের দোকানী লায়েছ মিয়ার ভাষ্যমত, সকালের দিকে তিনি দোকান থেকে দেখতে পান প্রায় ৭ থেকে ৮ শো লোককে নদী পার হয়ে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

সাবেক ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহির আহমেদ বলেন, জনপ্রতি ৬’শ করে টাকা নিয়েছে ট্রেনিং শেষে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা থেকে ২ লক্ষ করে টাকা দিবে প্রলোভনে ফেলে। তিনি ১০জন নারীকে নিষেধাজ্ঞায় ফিরিয়ে নিয়েছেন বলেও জানান।

বাজিতপুর উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনামসহ বেশ কতক থানা পুলিশ আটককৃত বাসের বিষয়ে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত স্থানীয়দের বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছেন বলে সরেজমিনে উঠে আসে।

এই ঘটনার বিষয়ে নিকলী থানার ইউএনও পাপিয়া আক্তারের সাথে দুপুরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।

নিকলী উপজেলার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি কিশোরগঞ্জের অফিসের কাজে গিয়েছেন বলে জানান। পাশাপাশি এই ঘটনার বিষয়ে বাজিতপুর উপজেলার ইউএনওর কাছে শুনেছেন এমনকি ছাতিরচরে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর রয়েছেন বলেও জানান।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, বিপিএম এর সাথে এই ঘটনার বিষয়ে কথা বলার লক্ষ্যে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Advertisement
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement
Advertisement