সাতক্ষীরায় হাসপাতালের ভুয়া বিল বানিয়ে ৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ , ৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ    

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা:

 

বিধি বহির্ভুতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সফটওয়ার ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ভুয়া বিলের মাধ্যমে ক্রয় দেখিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩ জন ডাক্তারসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

 

দূর্ণীতি দমন কমিশনের ঢাকা সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ রাকিবুল হায়াত সম্প্রতি এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

 

এদিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগপত্রে নাম আসছে এমনটি জানতে পেরে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রুহুল কুদ্দুসসহ চারজন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেন।

 

তদন্তকারি কর্মকর্তা তাদের আবেদনকে আমলে না নিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপরপরই ওই চার আবেদনকারি উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন।

 

একপর্যায়ে আদালত দুদকের প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে সম্প্রতি স্বশরীরে মহামান্য হাইকোর্টে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

 

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামীরা হলেন, ঢাকা পুরানা পল্টনের মেসার্ম মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার সরকার ও মোঃ আহসান হাবিব, ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিকেল কোঃ এর স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহের উদ্দিন সরকার, দিনাজপুরের ইউনিভার্সাল ট্রেড কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ আসাদুর রহমান, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর ডাঃ রুহুল কুদ্দুস, একই প্রতিষ্ঠানের (নাক-কান ও গলা) সহকারি অধ্যাপক ডাঃ নারায়ন প্রসাদ সান্ন্যাল, সহকারি অধ্যাপক ডাঃ সামছুর রহমান (শিশু) ও স্টোর কিপার আহসান হাবিব।

 

 

মামলার বিবরনে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিধি বহির্ভুতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ব্যতীত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ কোটি ৬ লাখ ৯৯ টাকার পিকচার আর্কির্ভিং এন্ড কমিউনিকেশানস সিস্টেম (পিএসিএস)” নামক সফটওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট ম্যাশিনারিজ কেনার উদ্যোগ নেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালিন তত্বাবধায়ক ডাঃ শেখ শাহাজাহান আলী।

 

এ জন্য তিনি বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ও সার্ভে কমিটি গঠণসহ ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী দরপত্র আহবান করেন। পরদিন দৈনিক আমার সংবাদ পত্রিকায় ও দি নিউজ টুডে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ঢাকার পুরানা পল্টনের মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার সরকার ও আহসান হাবিব এবং বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিকেল এর স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহেরউদ্দিন সরকার এর কার্যাদেশ পান। মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর আবেদনের ভিত্তিতে দরপত্রের বৈধতার মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের একটি “পিকচার আর্কির্ভিং এন্ড কমিউনিকেশানস সিস্টেম (পিএসিএস)” সফটওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরবরাহের জন্য ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল পিইসএস সফটওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ সরবরাহের চালান ডাঃ শেখ শাহজাহানকে দেওয়া হয়। ৩ সেপ্টেম্বর মালামাল বুঝে নেওয়ার জন্য কারিগরি সার্ভে কমিটি গঠণ করেন। কমিটির সভাপতি হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রুহুল কুদ্দুস, সদস্য সচিব হিসেবে সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সামছুর রহমান (শিশু) ও সদস্য হিসেবে সহকারি অধ্যাপক ডাঃ নারায়ন প্রসাদ সান্ন্যালকে (নাক, কানও গলা) অর্ন্তভুক্ত করা হয়। মালামাল বুঝে না পাওয়ার পরও ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সার্ভে সম্পন্ন করে চালানে সাক্ষর করেন সার্ভে কমিটির ওই তিন ডাঃ সদস্য। এরপর লেজারে লিপিবদ্ধ করার জন্য স্টোরকিপার আহসান হাবিবকে নির্দেশ দেন।

 

দুদক ২০১৯ সালের ১৫ মে সরেজমিনে তদন্ত করে ডাঃ শেখ শাহাজাহানের মেশিনারিজ কেনার যৌক্তিকতা ও ব্যবহারের নিয়ম নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেননি। দেখাতে পারেনি মালামাল। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ওই সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়নি মর্মে প্রতীয়মান হয়। সে অনুযায়ি সফটওয়ার ও সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ তৃতীয় কাসটমার একসেপ্টেন্স দেওয়ার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠণ করা হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালিন তত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রুহুল কুদ্দুস ও সহকারি অধ্যাপক ডাঃ সুতপা চ্যাটার্জীকে কমিটির সদস্য করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান চলাকালিন ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

 

এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক উপসহকারি পরিচালক ফেরদৌস রহমান বাদি হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক শেখ শাহাজান আলী, ঢাকার পুরানা পল্টনের মেসার্স মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার সরকার ও আহসান হাবিব এবং বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিকেল এর স্বত্বাধিকারী মোঃ জাহেরউদ্দিন সরকার ও দিনাজপুরের ইউনিভার্সাল ট্রেড কর্পোরেশনের স্বতাধিকারী আসাদুর রহমানের নামে উল্লেখ করে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে “পিকচার আর্কির্ভিং এন্ড কমিউনিকেশানস সিস্টেম (পিএসিএস)” নামক সফটওয়ারসহ সংশ্লিষ্ট ম্যাশিনারিজ সরবরাহ না করে ভুয়া বিল দাখিল করে উক্ত বিলের ভিত্তিতে সরকারের ৬ কোটি ৬ লক্ষ  ৯৯ টাকা আত্মসাত করার দায়ে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৭৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দূর্ণীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দূর্ণীতি দমন কমিশন খুলনার সমন্বিত কার্যালয়ে ৯ নং মামলা দায়ের করেন।

 

মামলার বিবরনে আরো জানা যায়,দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক উপসহকারি পরিচালক ফেরদৌস রহমান বদলী হওয়ায় তদন্তভার বর্তায় ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি পরিচালক মোঃ রাকিবুল হায়াত এর উপর।২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ডাঃ শেখ শাহজাহান মারা যান। প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পরষ্পর যোগসাজসে সরবরাহকৃত চালানে যথাসময়ে মালামাল বুঝে না পাওয়া এবং স্থাপন না হওয়া স্বত্বেও মালামাল বুঝে পেয়েছেন মর্মে ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর চালানে স্বাক্ষর  করে লেজারে লিপিবদ্ধ করার অভিযোগে উপরোক্ত আটজনের নামে গত ১৪ আগষ্ট সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

 

সাতক্ষীরার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু জানান, ৩ চিকিৎসকসহ  ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে আদালত  আগামি ৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *