সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু,বনদস্যু আতংকে মৌয়ালরা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, পাইকগাছাঃ

শুরু হয়েছে সুন্দরবনের মধু আহরণ মৌসুম। চলতি সপ্তাহের ১ এপ্রিল পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনে ও ৩ এপ্রিল পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা স্টেশন থেকে বনবিভাগের বৈধ পাস পারমিট নিয়ে মৌয়ালরা মধু আহরণে সুন্দরবনে ঢোকা শুরু করেছে। আহরণ চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। ঈদের ছুটির কারণে এবার পশ্চিম বনবিভাগে ১ এপ্রিল থেকে মৌসুম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকতা হবে ৭ এপ্রিল। এছাড়া একই কারণে পূর্ব বনবিভাগে ১ তারিখের পরিবর্তে শুরু হয়েছে ৩ এপ্রিল।

চলতি মৌসুমে সুন্দরবনে দস্যুদের দৌরাত্যসহ নানা সংকটে মহাজনদের চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অপহরণের ভয়ে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেননা মৌয়ালরা। ফলে শুরুতেই মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি ২০২৫ মৌসুমে সরকারিভাবে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫শ’ কুইন্টাল ও মোমের লক্ষ্য মাত্রা ৪০০ কুইন্টাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ১ এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনী ও কোবাদক স্টেশন থেকে ৯টি পাস সংগ্রহ করে এদিন সকালে মৌয়ালদের ৪টি নৌকা সুন্দরবনে প্রবেশ করে।

পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সূত্র জানায়, এবছর মৌয়াল ও নৌকার সংখ্যা অনেক কম। ৩ এপ্রিল প্রথম দিন ১৮টি নৌকায় পাস নিয়েছে। যেখানে গত বছর প্রথম দিনে ৩৩ টি নৌকায় পাস নিয়েছিল। অবস্থার পরিবর্তন পূর্বক পাসের সংখ্যা আশানুরূপ না হলে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ নিয়ে শুরুতই বনবিভাগের মধ্যে নানা আশংকা তৈরি হয়েছে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, পবিত্র ঈদুল-ফিতরের কারণে এবছর জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পহেলা এপ্রিলে মধু আহরণের উৎসব হয়নি। কিন্তু সীমিত পরিসরে বনজীবী মৌয়ালদের পাশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২২-২৩ অর্থ বছরে সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ হয় ১০২৩ কুইন্টাল এবং মোম সংগ্রহ হয় ৩০৬.৯০ কুইন্টাল। ২৯০টি পাসের মাধ্যমে ২০৪৬ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করে উক্ত মধু ও মোম সংগ্রহ করেন। পরবর্তী ২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩৬৪টি পাশের মাধ্যমে ২৪৭০ জন মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে যায়। তাদের সংগৃহীত মধু ১২৩৫ কুইন্টাল এবং মোম ৩৭০ দশমিক ৫০ কুইন্টাল। এবারও আশানুরূপ মধু ও মোম সংগ্রহের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।

মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের আগেই বন থেকে মধু চুরি, দস্যুদের হাতে অপহরণের ভয়সহ নানা সংকটে অনেকেই এবার মধু আহরণে যাবেন না। তাদের দাবি- দস্যুদের হাতে অপহরণ হলেই ছাড়া পেতে গুণতে হয় দুই-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ। ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও অনেকেই তাই নেননি নৌকার পাস-পারমিট।

একাধিক মধু ব্যবসায়ী  জানান, এক সময় বনে ঢুকলেই বনদস্যুদের চাঁদা দিতে হতো। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যেতেন তারা। এরপর চাঁদা দিতে না পারলে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হতে হতো অনেককে। তবে ২০১৮ সালে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর সুন্দরবনে নির্ভয়ে মধু আহরণ করে আসছেন মৌয়ালসহ বনজীবিরা। কিন্তু সর্বশেষ গত কয়েক মাস আগে আকষ্মিক একাধিক করে দস্যু বাহিনী স্বরুপে ফিরে পুরনো অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। ফলে আতংকে রয়েছেন তারা। যার প্রভাব পড়তে পারে মধু আহরণ মৌসুমে।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, এবার নতুন করে বনদস্যু আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তবে মৌয়ালদের নিরাপত্তায় বনবিভাগের পক্ষে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। কোনো নৌকা দস্যুদের কবলে পড়লে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বন অফিসগুলোতে জানানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মৌয়ালদের বলেও জানান তিনি।

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement