শহিদুল ইসলাম খোকন, গাইবান্ধা:
কখনো পাঁচশ কখনো বা এক হাজার টাকা আবার কোন সময় খালি হাতে ঘরে ফিরে আসেন দৃষ্টিহীন বাউল শিল্পী সন্তোষ । সারাদিন হাট- বাজার,রাস্তার মোড়ে,স্টেশনে,স্কুল মাঠে, চায়ের দোকান কিংবা নদীর ধারে আসর বসিয়ে দোতরা বাঁজিয়ে নিজের সুরেলা কণ্ঠে গান শোনাচ্ছেন তিনি। সন্ধ্যায় নেমে আসলে ফিরে যান নিজ বাড়িতে। তবে প্রায় সময় সন্তানের কাধেঁ উপর হাত দিয়ে কয়েক মাইল পথ হেটে ছুঁটে যান বিভিন্ন স্থানে।
তার গলার মিষ্টি কণ্ঠে গানের সাথে তাল মিলিয়ে আনন্দে মেতে উঠেন দর্শক । শ্রোতাদের পছন্দ মতো দোতরায় গানের সুর তুলে আনন্দ দেন দর্শকদের। বিভিন্ন গান গেয়ে শোনান দৃষ্টিহীন এই শিল্পী। কখনো বাউল, আবার আঞ্চলিক, মুর্শিদি, পল্লী গীতি,আবার কখনো ভাওয়াইয়া গান গেয়ে শোনান। তার গানে খুশি হয়ে দু টাকা,পাঁচ টাকা যা দিয়ে যান, দিন শেষে তা দিয়ে চলে তার সংসার। এভাবে টানা ৩০ বছর ধরে গাইবান্ধার বিভিন্ন স্থানে গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়ে আসছে তিনি।
সন্তোষ চোখ হারিয়েছে আট বছর বয়সে। টাইফয়েড রোগের পাশপাশি অন্যান্য রোগের আক্রান্ত হওয়ার পর অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি তার বাবা। তখন থেকে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে। তারপরেও হার মানেননি, অন্ধ হয়েও ভিক্ষা না করে গান শুনিয়ে আয় করে সংসার চালাচ্ছেন। তার একমাত্র সম্বল কাঁধে ঝুলে থাকা দোতরা।
বাল্যকালে পিতা- মাতাকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি।ভাই-বোন,স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ ৬ সদস্যের সংসার।
তার নিজ গ্রামে সম্পত্তি বলতে কোন কিছু নাই। নিজের সর্বশেষ সম্বল একটি বাড়ি। সেখানে পরিবারের সবাই বসবাস করেন। সন্তোষের বাড়ি ঘাঘোয়া ইউনিয়নের কাটি হারা গ্রামে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে ও গুরু মানেন গ্রামের খলিল নামের এক বাউল শিল্পীকে।
কথা হয় দৃষ্টিহীন শিল্পী শ্রী সন্তোষ চন্দ্র বর্মন সাথে তিনি বলেন, ছোটবেলায় টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে তার দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। এরপর থেকে একজন বাউল শিল্পীর কাছ থেকে গান শেখেন। পরে বিভিন্ন স্থানে গান করে বেড়ান। যা পান তাই দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলে।
প্রতিবন্ধী কার্ড ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পাননি কোনো সহযোগিতা। তাই প্রধান উপদেষ্টাসহ সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন সন্তোষ। একটু সহযোগিতা পেলে হয়তো শেষ বয়সটা শান্তিতে কাটাতে পারতেন তিনি। কিনতে পারতেন ভালো একটা দোতরা।
সন্তোষ আরো বলেন, আমার চোখ হারিয়েও থেমে থাকেনি। ভিক্ষা করতে আমার লজ্জা লাগে। তাই গান গেয়ে সবাইকে শোনায়।