কাঁঠালিয়ার আমুয়ায় ঐতিহ্যের দশরা উৎসব

কাঠালিয়া প্রতিনিধি:

 

 

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া বন্দরের হলতা নদী মোহনায় দুইদিন ব্যাপী দশরা উৎসব পালিত হচ্ছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে দুইদিনের এ উৎসব শুরু হয়েছে। বিষখালী নদীর তিনটি শাখা নদীর হলতা মোহনায় প্রতিবছরের মত এবারও দশরা উৎসবে উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার উৎসব মুখর মানুষ সমবেত হন। বিজয় দশমীর শেষ বিকেলে নদী মোহনায় দুর দুরান্ত থেকে যান্ত্রিক ট্রলারে দূর্গা প্রতিমা এ নদী মোহনায় নিয়ে এসে সন্ধ্যায় মোহনায় বিসর্জণ। এছাড়া আজ রোববার আমুয়া বন্দরে বার দেশোহরা অনুষ্ঠিত হয়।

 

এদিন বিকেলে উৎসবের প্রথম দিনে আমুয়ার হলতা নদীর মোহনায় সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, দশরা উৎসবকে ঘিরে দুর দূরান্ত থেকে উৎসব মুখর মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবস্থল যেন জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছে। শতশত যান্ত্রিক ট্রলার আর নৌকায় চড়ে নাচ গানের মধ্য দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ ঐতিহ্যবাহী দশরা উৎসব পালন করে।

 

এ সময় উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন দূর্গা পূজা মন্ডপ হতে সেখানে যান্ত্রিক ট্রলারে করে দূর্গা প্রতিমা দশরা উৎসবে নিয়ে আসা হয়। প্রতিমা বহনকারী ট্রলার নদীর মোহনার চারপাশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে এ উৎসব পালন করেন। উৎসবে সকল ধর্মের মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন।

 

আমূয়া ইউনিয়ন দূর্গা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বলরাম কাঞ্জিলাল জানান, আমুয়ার দশরা উৎসব সরকারী-বেসরকারী কোন সহায়তা না থাকায় আড়াই শত বছরের এ ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি আগের চেয়ে অনেক ম্লান হতে চলেছে।

 

এ ব্যাপারে গৌতম বিশ্বাস গৌরঙ্গ জানান, আড়াইশ বছরের পুরানো আমুয়ার দশরা উৎসব। ১৭০০ শতকে শেষ দিকে অত্র এলাকার জমিদার রায় বিহারী লাল মিত্র বাহাদুর আমুয়া বন্দরে দশরা উৎসবের প্রচলন করেন। সেই থেকে আজ অবধি এ উৎসব চলে আসছে। অনুষ্ঠানে জারি সারি কবিগান নৌকাবাইচসহ না অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দশরা উৎসবে আমুয়া বন্দর ঘিরে মেলা বসে।

 

নানা সংকটে এ উৎসব এখন কোনমতে টিকে আছে। তাছাড়া উপকুলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ খাল গুলোর নাব্যতা হ্রাস ও খালে বাধ দেওয়ায় নৌ চলাচল কমে গেছে। ফলে উৎসবে নৌপথে আগের মত প্রতিমা না আসতে পারার কারনে এ উৎসবটি অনেক ম্লান হতে বসেছে। পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে আমাদের এ সংস্কৃতি।

 

এ ব্যাপারে আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো.নকিরুল ইসলাম বলেন, আমুয়ার দশরা ও বারদশরা উৎসব শিশুকাল হতেই দেখে আসছি। উপকুলীয় এলাকার হিন্দু মুসলমানদের মিলন মেলা হিসেবে এ উৎসবকে আজও দেখা হয়। বর্তমান সরকারঐতিহ্যেও এ উৎসব টিকিয়ে রাথতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে আমাদের সকলের উচিৎ সক্রিয়ভাবে এ দশরা উৎসব টিকিয়ে রাখা। কেনানা এ উৎসব আমাদেরও আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *