ফার্মগেটে চাঁদাবাজির সীমানা নিয়ে কাউন্সিলর ইরানের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত-১০

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আমাদের কণ্ঠ প্রতিবেদন:

রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে লেগুনাস্ট্যান্ড দখল নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরানের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি হামলায় ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালি সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭নম্বর ওয়ার্ডের ফার্মগেট এলাকায় দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কোচিং বাণিজ্য সবকিছুই কাউন্সিলর ইরানের একক নিয়ন্ত্রণে চলছে। তার ক্ষমতার কাছে সবাই ধরাশায়ী। তার ইচ্ছার বাইরে গেলেই চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ভয়ে মুখ খোলেন না কেউ। অনেকের মতে ফার্মগেট এলাকার ‘অঘোষিত রাজা’ ইরান। তার কথাই সেখানে আইন, তিনিই সর্বেসর্বা ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় দোকানে চাঁদাবাজি করে তার লালিত বাহিনী। তেজগাঁও কলেজেও তার একক আধিপত্য। কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। ফার্মগেট এলাকায় যত কোচিং সেন্টার আছে, সবগুলোই ইরানের নিয়ন্ত্রণে। এখান থেকে প্রতি মাসে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। হোটেলের পাশের একটি বাড়ি দখলে নিয়েছেন। সেটি ভেঙে বর্তমানে একতলা ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। ইরানের ক্যাডার বাহিনী সেখানে আড্ডা দেয় ।

রবিবার সকাল আটটার দিকে ইন্দিরা রোডে লেগুনা স্টানে মিথুন ঢালী এসে খামার বাড়ি থেকে ৬০ ফিট ও মিরপুর যাওয়ার ইস্টার্ন দখল করতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ভাই সাত্তার ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন ঢালির উপর হামলা চালায়। স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা গণমাধ্যমকে জানায়, কাউন্সিলর ইরানের নির্দেশে মিথুন ঢালী কাউন্সিলরের আরে ক্যাডার সাত্তারের লেগুনা স্ট্যান্ড দখল করতে যায়, সে সময় সাত্তার ও মিথুন ঢালী ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে,দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর নির্দেশে মিথুন ঢালীর উপর হামলা চালায়।

তিনি আরো বলেন, ইন্দিরা পরিবহন দুই ভাগে পরিচালনা হয়। ফার্মগেট টু মোহাম্মদপুর-জিগাতলা পরিচালনা করেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু ও খামারবাড়ি থেকে ৬০ ফিট ও মিরপুর পরিচালনা করেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ভাই সাত্তার। চুন্ন কাউন্সিলরের লোক হলেও সাত্তার কাউন্সিলরের লোক নয়, চুন্নু কাউন্সিলরকে চাঁদা দিলেও সাত্তার কাউন্সিলরকে পাত্তাও দেয় না। সেজন্যই কাউন্সিলরের লোক মিথুন ঢালীকে দিয়ে সাত্তারের লেগুনাস্ট্যান্ড দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ছেলের সামনে তার চাচার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করলে উল্টো দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর নির্দেশে তার ছেলে এবং তার বড় মেয়ের জামাই লেগুনা ড্রাইভার হেল্পারসহ প্রায় ৪০ জন মিলে মিথুন ঢালির উপর হামলা চালায়। ঘটনার পরে পথচারীদের সহযোগিতায় টহল পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে গ্রীন লাইফ হসপিটালে নিয়ে যায়।

ওই যুবলীগ নেতা আরো বলেন, এর কিছুক্ষণ পর কাউন্সিলর ইরানের নির্দেশে তেজগাঁও কলেজ থেকে আরেক গ্রুপে এসে হামলা চালায় দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ভাই সাত্তার ও ছেলের উপর হামলা চালায়। সে সময় চুন্নুর ভাই ছাত্তার জোরালো আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে কাউন্সিলর বাহিনী শটকে পড়লে স্থানীয়রা সাত্তারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইন্দিরা রোডের পাশের বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড গণমাধ্যমকে জানায়, আমরা চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখি দুজন লোককে অনেক লোকজন মিলে প্রচুর মারধর এবং পুলিশ এসে ওই দুজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় আর কিছু সময় পর আরেক গ্রুপে এসে লেগুনা পরিবহনের মালিক ও ড্রাইভারদের এলোপ্যাথারি মারধর করতে থাকে এবং লেগুনা ভাঙচুর করে।

মনিপুরী পাড়ার বাসিন্দার আতিকুর রহমান বলেন, খামার বাড়ির দক্ষিণ পাশে বট গাছে নিচের চায়ের দোকান ছিল, সেখানে আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা মারতাম। একদিন চুন্নুর ছেলে শুভ আমাদের পাশেই বসে চা খাচ্ছিল,হঠাৎ করে দুই তিন জন ছেলে মিলে একটি মেয়েকে ইভটিজিং করে। সে সময় আমরা প্রতিবাদ করলে সে আমাদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে এবং বলে তোমরা আমাকে চিনো, আমি কাউন্সিলরের নাতি। তোমরা এখানে কিভাবে চা খাও এবং আড্ডা দাও এটা আমি দেখব। তার কিছুদিন পর কাউন্সিলরের বড় ভাই দুরান নিজে উপস্থিত থেকে সেই সমস্ত চায়ের দোকান উচ্ছেদ করে,এবং দেলোয়ার হোসেন চুন্নু বটগাছটি একটু সেটেছুটে সেই ফুটপাতের উপর তার ছেলে শুভকে হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট বানিয়ে দেয়।

আতিক আরো বলেন, কিভাবে খামারবাড়ি ব্যস্ত এলাকায় ফুটপাতের উপর ১তালা ছাদ বিশিষ্ট বিল্ডিং করে হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট বানায়। আপনারা বুঝে নেন এদের ক্ষমতা কতটুকু। এরা কাউন্সিলরের লোকজন। এদের সামনে কথা বলতে কেউ সাহস পায় না। এ বিষয়ে ইন্দিরা পরিবহনের মালিক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অপারগতা জানান। কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান বলেন, আমি মারামারির ঘটনা ঠিক ভাবে জানিনা, জেনে আপনাদেরকে জানাবো এ বিষয়ে শেরেবাংলা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, আমাদের থানায় এখনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *