মোঃ রফিকুল ইসলাম খান,পাইকগাছা:
খুলনার পাইকগাছার কপোতাক্ষের নদের উপর সেতু নির্মাণের কাজ ২৩ বছরেও শেষ হয়নি।সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ জনপদের বাণিজ্যিককেন্দ্র পাইকগাছার কপিলমুনিতে কপোতাক্ষের ওপর সেতুর নির্মাণকাজ ২০০০ সালে শুরু হলেও গত ২৩ বছরেও তা শেষ হয়নি। মাঝপথে ২০০৩ সালে নানা অজুহাতে নির্মাণকাজ বন্ধের সাথে সাথে মৃত্যু হয় বিস্তীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের। এমন অবস্থায় কপোতাক্ষের বুকে ফেলে রাখা ব্রিজের ১৬টি অকেজো পিলারে জোয়ারের পলিমিশ্রিত পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে মাত্র কয়েক বছরে নাব্যতা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। নদের প্রাণ ফেরাতে সরকার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে কপোতাক্ষ খনন করলেও ফেলে রাখা ১৬টি পিলারই যেন আজ কপোতাক্ষের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকার এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা করে কপোতাক্ষ খননে ২০১১ সালের নভেম্বরে একনেকের সভায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কপোতাক্ষ খননে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের পরও ফিরে আসে জোয়ার-ভাটা। নদীর ওপর নির্ভরশীল জনপদের মানুষের মধ্যে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। তবে ২০০০ সালে শুরু হয়ে ২০০৩-এ বন্ধ হওয়া কপিলমুনির নির্মাণাধীন ব্রিজের ১৬টি বৃহদাকার পিলার যেন ফের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীটির স্বাভাবিক গতি সচলে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিনোদ বিহারি সাধুর রেখে যাওয়া টাকার লভ্যাংশ কিংবা কোনো টাকা ফেরত না পেলেও এলাকাবাসী ব্রিজ নির্মাণে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কপিলমুনি-সাতক্ষীরার জেঠুয়া ব্রিজের নির্মাণকাজে সরকার ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দ দেয়। তবে উপকরণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি ও কাজের মানোন্নয়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে তা ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তির পর নির্মাণের দায়িত্ব পায় খুলনা-৬ আসনের তত্কালীন সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নূরুল হকের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন হক অ্যাসোসিয়েট। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল কাজ শুরু হয়। এরপর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা থেকে বরাদ্দের ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা উত্তোলন করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। পরে ব্রিজটির নির্মাণ বাস্তবায়ন আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রতার কারণে ব্রিজ নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে ইসলাম গ্রুপ নামের আরো একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু করলেও নদীর ওপর নির্মিত ১৬টি পিলারের কয়েকটি বেঁকে যাওয়ায় তারাও কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি। সাতক্ষীরা পাউবোর কাছে এন হক অ্যাসোসিয়েট ও ইসলাম গ্রুপ মিলে ডিও লেটার দেয় যে বাঁকা পিলারের উপর কোনভাবেই ব্রিজ টিকবে না। এ জন্য স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এর নির্মাণ কাজ।
এ ব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওসার আলী জোয়াদ্দার বলেন, বর্তমানে ব্রীজটি নির্মাণের কোন সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে ব্রিজটি নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে।