পানি শুকাতেই নিকলীতে চর দখলের দ্বন্দ্ব চরমে!

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

আশরাফুল আলম,স্টাফ রিপোর্টার (কিশোরগঞ্জ)

নিকলীতে হাওরের পানি শুকিয়ে যেতেই শুরু হয়েছে চর দখলের বিষয়ে প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্ব। চরের মালিক প্রকৃতপক্ষে সরকার হলেও বাস্তবে স্থানীয় ক্ষমতাসীনরাই যেনো সেখানকার মালিক ও হর্তাকর্তা। লাল নিশান টাঙিয়ে চলে এখানকার চরের দখল। এবার স্থানীয় আ’লীগ পরবতী সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চরের ভূমি দখলের সীমাহীন অভিযোগ উঠেছে। দেশে অন্তবর্তীকালীন সরকার থাকলেও বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব বেশি বলে স্থানীয়ভাবে দখল বানিজ্য অসাধু কিছু বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে জবর দখলের। তবে চর নিয়ে স্থানীয় প্রসাশনের ভাষ্য এটা ঘোড়াউত্রা নদীর অংশবিশেষ। এর মালিক সরকার। তাই জরীপ না হওয়া পর্যন্ত এটা সম্পূর্ণই ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত। এই মুহূর্তে স্থানীয়ভাবে বন্দোবস্তের নিয়ম নেই বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারি কয়েকশত একর জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন থেকেই। এই সেক্টরে তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের ভাষ্য।

কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওর এলাকার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে দুঃস্থ অসহায় বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত আইনে ডিসিআর মূলে যারা ১একর ভূমি ভোগ দখল করার নিয়ম বরং বিপরীতে অহায় না হলেও ভোগ দখলে আছেন কয়েকগুণ বেশি। যদিও ২০১৪ সালের পর থেকে বন্দোবস্ত আইন বাতিল হয়েছে তবুও প্রসাশনের মৌলিক অনুমতি সাপেক্ষে ভোগ দখলের অনুমতি পায় অতীতের ১ একরই। সুষ্ঠু বন্টন আর তদারকিরও যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় বরাবরের মতোই বেশ কিছু চরের ন্যায় নিকলী সদর বোরোলিয়া মৌজার চরের দ্বন্দ্বও চরমে।

কিশোরগঞ্জের প্রবাহমান একটি নদীর নাম ঘোড়াউত্রা। সিলেটের উত্তর পূর্ব সিমান্তের বৃহৎ নদীর নাম সুরমা। যেটি উজানের ভারত থেকে নেমে এসেছে বাংলাদেশে। জকিগঞ্জের বরাক মোহনায় এর উৎপত্তি। সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে দুটি ভাগে একটি সুরমা অপরটি কুশিয়ারা। সুরমা নদীটি সুনামগঞ্জ থেকে সোজা দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুড়ি হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় প্রবেশের পর প্রবাহিত হয়েছে ধনু নদী নামে। এটি মিঠামইন ও নিকলীতে এসে ঘোড়াউত্রা নাম ধারণ করে বাজিতপুরের উপর দিয়ে কুলিয়ারচরের কাছাকাছি গিয়ে পতিত হয়েছে মেঘনায়। প্রবাহমান এই মেঘনার বিভিন্ন স্থানে নদী তার বাঁকে বাঁকে আপন গতিতে জাগিয়ে তোলেছে চর। কোথাও কোথাও চিনিয়ে নিয়েছে তার গর্ভে ঘরবাড়ি আর নদী সংলগ্নের ফসলি জমি। নদী নিকু আইনে সরকার বস্তহারাদের মাঝে অস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে চর দিয়ে সহায়তা করার নিয়ম থাকলেও। সেখানকার চিত্র অনেকটা ব্যতিক্রম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০০ ও ২০০১ অর্থ বছরে সরকারিভাবে অসংখ্য দুঃস্থ অসহায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও ভূমিহীন বিবেচনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাদেরকে নদীর জেগে উঠা চরে রাজস্ব আদায় সাপেক্ষে একসনা বন্দোবস্তা আইনে ১একর কৃষি খাসজমি অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেয়ার অনুমতি দিলে তারা চাষাবাদ শুরু করে। অনেকের জমি আবাদ অযোগ্যও থাকতেও দেখা গেছে দীর্ঘদিন। হামলা, মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে এই চর নিয়ে দফায় দফায়। যুগে যুগে ক্ষমতাসীনদের দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো আবাদের এই মৌসুম শুরু হলেই। তাছাড়া অসহায় বিবেচনার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় নিয়েও শুরু থেকেই ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে দীর্ঘ সময় ব্যাপী আ’লীগ সরকার ক্ষমতা থাকায় চর নিয়ে দুর্নীতিবাজরা মাথাচাড়ায় বেপোরোয়া ছিলো। নিকলী সদর এলাকার বোরলিয়া মৌজার মধ্যে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের এক একরের পরিবর্তে সচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাও তার পরিবারের লোকেরাও বনে যান কয়েক একরের মালিকে। অপরদিকে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীদের অনেকেই আবার দখল নিয়েছেন চরের বিপুল পরিমাণ জমি‌। নদী নিকু আইনে যারা পাওয়ার কথা ছিল চর। তাদের অধিকাংশই হয়েছে বঞ্চিত বরং যুগে যুগে ক্ষমতাসীনরাই যেনো বনে গেছে চরের মালিক।

গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে আ’লীগ নেতাকর্মীরা চরের বিভিন্ন অংশের দখল ছাড়তে বাধ্য হলেও এবার মুক্তিযোদ্ধারা চর দখলের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে জোর পূর্বক মুক্তিযোদ্ধাদের জমি দখল করে নেয়া প্রসঙ্গে নিকলী সদর পূর্ব গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান আলীর ছেলে মো. রেজাউল হাসান একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় বরাবরে। অনুলিপি প্রদান করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী এবং যুগ্ম মহাসচিব ময়মনসিংহ সাংগঠনিক বিভাগের হাবিব উন নবী খান সোহেল বরাবরে।

এছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমসহ জেলা সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলামকেও কপি প্রেরণ করেন। অভিযোগে উল্লেখ এই পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিতে হস্তক্ষেপ না করলেও গত ১ডিসেম্বরে উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মানিক মিয়া ও জেলা বিএনপির সদস্য ডাঃ কফিল উদ্দিন এই তিন জনের নির্দেশে আরও ৮জন দলীয় নেতাকর্মী মিলে রাজাকার স্লোগানে তাদেরকে খুন জখমের হুমকি প্রদর্শনে বন্দোবস্তের জমিতে লাল নিশান টাঙিয়ে নেন বলে অভিযোগ তোলেন। এছাড়াও উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবরেও একই অভিযোগ সদরের রুহু সর্দারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২০ নভেম্বর সদর ইউনিয়ন কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীও করেছেন বলে স্থানীয় প্রসাশন সূত্র নিশ্চিত করে।

তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভাষ্য একসনালে ১ একরের মালিক হলেও তারা দখলে নিয়েছিলো কয়েকগুণ বেশি করে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বাকী চর দখলে ছিলো আ’লীগ নেতাকর্মীরা। নিয়ম অনুযায়ী সরকার চরের মালিক হলেও এখানে অনিয়মের দৃশ্য বিরাজমান। তাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রক্ষার্থে আইনের সহযোগিতায় মিমাংসার চেষ্টা করেছেন বলে জানান।

এই বিষয়ে বদরুল মোমেন মিঠুকে ৫ ডিসেম্বর বিকালে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সাবেক থানা বিএনপির সেক্রেটারী ও জেলা বিএনপির সদস্য কপিল উদ্দিনের সাথে কথা হলে দীর্ঘদিন ধরে তিনি স্থানীয় নেতৃত্বে নেই জানিয়ে আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বিষয়টি ডিল করেছেন বলে দাবি করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রসাশনের সহযোগিতায় এলাকার শান্তি রক্ষার্থে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করেন।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট মানিক মিয়া বলেন, আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি করার কারণে নিজেও বঞ্চিত ছিলাম। তবে নিয়ম অনুযায়ী ১ একরের স্থালে অনেকে আ’লীগ দাপটে ১৫ একর পর্যন্ত দখলে নিয়েছে। আমি এখানকার ভূমির দখল চাই না। তবে যারা অসহায় তারা ভোগ করুক, এটা চাই। অনেক মুক্তিযোদ্ধা আ’লীগ প্রভাবে কোটিপতি তারাই এখনো অধিক পরিমাণে ভূমি ভোগ দখল করে আছেন। উপজেলাতে বসে প্রসাশনের সহযোগিতায় আপোষের মাধ্যমে দেড় একর করে দিলেও তারা এখন বিভিন্ন মহলে একাধিক সাজানো অভিযোগ দিয়ে চলেছেন একের পর এক।

জেলার সেক্রেটারীর মাজহারুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি দলীয় ভাবে এখনো কোনো অভিযোগের কপি পাননি। তবে বিষয়টি নিয়ে দেখবেন বলে জানান। তাছাড়া জেলা প্রশাসক এই বিষয়টি নিয়ে গতকালও আলোচনা করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

নিকলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তারের কাছে অভিযোগ ও এর বাস্তবতা বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে তিনি জরীপ না হওয়া পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না বলে জানান। এটাকে ঘোড়াউত্রা নদীর অংশ বিশেষ উল্লেখ করে সরকারের এই ভূমিকে সম্পূর্ণই ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার বলে জানান। পাশাপাশি এখন অস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন। তবে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে মুঠোফোনে বিকালে পাওয়া যায়নি।

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement