বরিশালে চাঁদা না দেওয়ায় ৪ হাজার একর জমিতে সেচ বন্ধ, চাষাবাদ ব্যাহত

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:

বরিশালের গৌরনদীতে চাঁদা না দেওয়ায় উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের সাতটি ও বাটাজোর ইউনিয়নের পাঁচটি বোরো প্রকল্পে সেচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই ইউনিয়নে ১২টি বোরো প্রকল্পের তিন হাজার কৃষকের চার হাজার একর জমির চাষাবাদ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ উত্তর সীমানায় প্রাইমারি সেচ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গত শুক্রবার ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এজাহার, ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ উত্তর সীমানায় আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পালরদী নদীর স্টিমারঘাট এলাকায় সেচপাম্প বসিয়ে প্রাইমারি প্রকল্পের মাধ্যমে নলচিড়া খাল ও বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া খালে সেচ প্রকল্প চালু করেন বছার গ্রামের আব্দুল হামিদ সরদারের ছেলে মো. জাকির হোসেন। প্রকল্পটি তদারকি করেন তার বড় ভাই মো. আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ারের অভিযোগ, গত ২ জানুয়ারি তিনি সেচপাম্প বসিয়ে প্রাইমারি প্রকল্প থেকে সেকেন্ডারি ১২টি প্রকল্পে সেচ দিয়ে পানি সরবারহ শুরু করেন। এ সময় উপজেলার বাসুদেবপাড়া গ্রামের কাঞ্চন মৃধার ছেলে মো. সানাউল মৃধা ও শংকরপাশা গ্রামের কালাম খানের ছেলে মামুন খানের নেতৃত্বে সাত-আটজন সন্ত্রাসী এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় সেচপাম্প বন্ধসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়। পরে হুমকির মুখে গত ৫ জানুয়ারি পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করলে বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাকি টাকা না দেওয়ায় পাম্প বন্ধ করে দেয় এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। সন্ত্রাসী সানাউল চলে যাওয়ার সময় তাদের নির্দেশ ছাড়া সেচযন্ত্র চালু করলে হত্যার হুমকি দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের একাধিক ব্যবস্থাপক বলেন, বোরোর চলতি মৌসুমে জমিতে পানি সরবারহ শুরু হলে আমরা জমি প্রস্তুত করি। কিন্তু হঠাৎ পানি সরবারহ বন্ধ হওয়ায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। মো. রুস্তুম সরদার, সান্টু খলিফা, নজরুল খলিফাসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, গুটিকয়েক চাঁদাবাজদের জন্য কয়েক হাজার কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারছে না।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মো. সানাউল মৃধা বলেন, ‘আগের সেচ প্রকল্পের মালিকের কাছ থেকে আমি লিখিতভাবে প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। সেই প্রকল্প জাকির হোসেন দখল করতে চান বলে আমি তাতে বাধা দিয়েছি। চাঁদা দাবির অভিযোগ সঠিক নয়।’ তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সরকারি নদীর পানি তুলে যে কেউ সেচ দিতে পারে। সেখানে কেউ প্রকল্প ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে প্রকল্প চালু করেছি।’
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেকেন্দার শেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় প্রাইমারি সেচ প্রকল্পের তদারককারী মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *