কালীগঞ্জে প্রধান শিক্ষক, যুবলীগ সভাপতিসহ ৮ জনের নামে চাঁদাবাজির মামলা  

আক্তারুল ইসলাম, সাতক্ষীরাঃ

দাবিকৃত ৫ লক্ষ্ টাকা  চাঁদা  না পেয়ে অসহায় নৈশ প্রহরীকে মারপিট ও চাকরি চুত্যর ভয় দেখিয়ে অফিসে ফেলে জোরপূর্বক পদত্যাগ  পত্রে স্বাক্ষর করানোর ঘটনায় সংঘবদ্ধ  চক্রের মূল হোতা প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বাছাড়, প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল বারী সফু, সাবেক এমপি এস,এম দোলনের সহযোগী যুবলীগ সভাপতি নাজমুল আহসান সহ ৮ জনের নামে চাঁদাবাজির ঘটনায়  মামলা দায়ের হয়েছে।

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী নৈশ্ প্রহরী গণপতি গ্রামের মৃত আদম আলীর পুত্র মাসুদ আলী বাদী হয়ে গত  ৯  সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলী -২ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সি, আর ৬৬৫/২৪( কালীঃ)। দন্ডবিধি ৩৮৪/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/৫০৬ ২য় অনুচ্ছেদ /১০৯। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন সাতক্ষীরাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলো কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব রবীন্দ্রনাথ বাছাড়, অত্র স্কুলের সাবেক সভাপতি সাবেক এম,পি এস,এম আতাউল হক দোলনের সহযোগী থানা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আহসান, বিদ্যুৎসাহী সদস্য কালিগঞ্জ  প্রেস ক্লাবের সভাপতি বাজার গ্রামের মৃত শেখ গোলাম বারীর পুত্র শেখ সাইফুল বারী সফু, অভিভাবক সদস্য বসন্তপুর গ্রামের সিদ্দিকুল ইসলাম, মহৎপুর গ্রামের সুকুমার বৈদ্য, বসন্তপুর গ্রামের আবুল খায়েরের পুত্র শেখ নাজিমউদ্দিন এবং মৃত শিবু মন্ডলের পুত্র বিশ্বজিৎ দাস এবং দাতা সদস্য বাজার গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন হাজির পুত্র সাকির আহমেদ।

আদালতে দায়ের করা মামলার সূত্র ও ভুক্তভোগী মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ১৯৯৪  সাল হতে নৈশ্ প্রহরী হিসেবে কালিগঞ্জ পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছে । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ -শ্যামনগরের সাবেক  সংসদ সদস্য এস, এম আতাউল হক  দোলনের সহযোগী কালিগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আহসান সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বাছাড় মিলে এই চক্রটি আমার নিকট গত ১ জুলাই স্কুলের মধ্যে ৫ লক্ষ্  টাকা চাঁদা  দাবি করে। আমি চাঁদার টাকা  দিতে অস্বীকার করায় গত ১৩ জুলাই বেলা ১২ টার সময় বিদ্যালয় অফিস কক্ষে ডেকে ছুরির ভয় দেখিয়ে মারপিট করে  সাদা কাগজে সই নিয়ে চাকরি চুত্যে  করে   স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই স্বাক্ষরকৃত সাদা কাগজে নিজেদের ইচ্ছামতো স্বেচ্ছায় পদত্যাগ  লিখে  নিয়ে বোর্ডে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে আর স্কুলে ঢুকতে দেয় না । তখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় প্রভাব খাটিয়ে আমাকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করেছে। গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে যায়।  এখন সময় এসেছে তাই চাকরি ফিরে পাওয়া এবং ন্যায় বিচারের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বাছাড়ের নিকট ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান,স্কুলের ভিতরে  একটি অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনা নিয়ে সে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে। এখন সে উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে জানান। তবে অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি  কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল   কিনা? হলে তার কোন প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে কিনা? সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কোন সদুত্তর  দিতে পারেননি।

যুবলীগ সভাপতি নাজমুল আহসান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিন পর স্কুলে অসামাজিক কার্যকলাপ করার ঘটনায় নৈশ প্রহরী মাসুদ নাকি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছে  বলে প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছিল। পরে সেটা বোর্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটি  সম্পর্কে তিনি কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে কোন সদুত্তর মেলেনি। প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বাছাড়ের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই স্কুলের ভোকেশনাল বিভাগের শিক্ষিকা শান্তি বালা দীর্ঘ ১০ বছর যাবত অসুস্থ প্যারালাইজড শয্যশাহী অবস্থায় বাসায় কাটালেও তিনি দিব্যি তার হাজিরা খাতায় হাজিরা দেখিয়ে প্রতিমাসের বেতন উত্তোলন করে তার থেকে প্রতিমাসে মোটা  অংকের টাকা উৎকোচ নিয়ে নিয়মিত শিক্ষক হিসেবে দেখিয়ে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন  পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রকাশ পেলে সু- চতুর প্রধান শিক্ষক জুলাই মাসে তাকে বিনা বেতনে দরখাস্ত নিয়ে  অসুস্থ দেখিয়ে নাটক করে আসছেন। অথচ শিক্ষিকা শান্তিবালা বর্তমান প্যারালাইজড অবস্থায়  বাসায় শয্যাশাহী আছেন। বিগত কয়েক মাস আগে কম্পিউটার বিভাগে একজনকে নিয়োগ দিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে  এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *