শহিদুল ইসলাম খোকন, গাইবান্ধাঃ
আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূঁজোকে সামনে রেখে নিপূণ হাতে কাঁদামাটি, খড়, বাঁশ, সুতলি ও রং দিয়ে গাইবান্ধায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।প্রতিমা তৈরির কাজে দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। জেলার বিভিন্ন মন্ডপে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষী, স্বরসতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমা। মন্ডপে,মন্ডপে চলছে অবকাঠামো তৈরির কাজ,আবার কোথাও চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা ঘনিয়ে আসায় যেনো দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা তৈরির কারিগরদের।শরতের উজ্জ্বল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনার মধ্যে, কাশফুলের শুভ্র আন্দোলনের সাথে তাল মিলিয়ে বাঙলা পঞ্জিকায় বছর ঘুরে আসে শরৎ । প্রকৃতিতে ঋতুর রাণী শরতের আগমনেই সনাতন ধর্মালম্বীদের মনে দোলা দেয় দশভুজা মহামায়া ত্রিনয়নী দেবীর আবাহনী । জানান দেয় শারদীয় উৎসবের।
দুর্গতিনাশিনী দেবীর আগমনী বার্তায় ভক্তকূলে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাইতো দেবী দুর্গাকে ঢাঁক, ঢোল, উলু আর শঙ্খ ধ্বনিতে বরণ করতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন ভক্তকুল।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আকার আর নানা সব কারুকাজে দেবী দুর্গার প্রতিমা বানানোর ব্যস্ততা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমার র্পূণরুপ দিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে মালাকরেরা।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের কালিতলা এলাকার প্রতিমা কারিগর নয়ন চন্দ্র মালাকার বলেন, বাপ—দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। মৃৎশিল্পীদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। প্রতি বছর দুর্গা উৎসব আসলে কয়টা টাকার মুখ দেখি। তিনি আরো বলেন এবার কারখানায় ২৫টি প্রতিমা বানিয়েছিলাম। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিমা গুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সব শঙ্কা কাটিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিমাগুলোর বায়না পেয়েছি। পুজোর দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই চাহিদা বাড়ছে।
অপরদিকে আরেক মালাকার সাধন চন্দ্র বলেন, পুজোর দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আমাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। সঠিক সময়ে প্রতিমা গুলো ডেলিভারি দিতে কারখানায় ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এবার প্রতিটি প্রতিমা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামজীবন ইউনিয়নের পূজামন্ডপ কমিটির সভাপতি দেবেন বাবু জানান, মহাপঞ্চমীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের শুরু পরদিন মহাষষ্ঠীতে পূজা থেকে মন্ডপে মন্ডপে বেজে উঠবে ঢাকঢোল আর কাঁসার শব্দ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসব ।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারন সম্পাদক বিমল চন্দ্র সরকারের তথ্যমতে এবার জেলায় প্রায় ৫৬৩ টি পূজা মন্ডপে পূজা অর্চনা হবে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৯৪টি, সাদুল্লাপুর উপজেলায় ৯১টি, পলাশবাড়ী উপজেলায় ৫৭টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১২৫টি, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১২৫টি, ফুলছড়ি উপজেলায় ১৩টি ও সাঘাটা উপজেলায় ৫৮টি পূজা মণ্ডপ রয়েছে।
তবে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপ নেই। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কেন্দ্র করে কিছু দুষ্কৃতকারী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য পায়তারা করবে,সে দিকটা আমাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তিনি আরো বলেন জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন পূজা ভালোভাবে পালনের লক্ষ্যে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সদর থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, সুষ্ঠুভাবে পূজা পালনের জন্য শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, নজরদারি ও মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ আল হাসান বলেন, পূজা সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য প্রশাসনিক ভাবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার রাখার নির্দশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।