বরগুনার খেয়াঘাটগুলো থেকে  রাজস্ব আদায় হলেও খরচ নেই যাত্রীসেবা খাতে 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

মোঃ আসাদুজ্জামান, বরগুনা

বরগুনায় জেলা পরিষদের ইজারা দেয়া ১৫টি খেয়াঘাটে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও অধিকাংশ খেয়াঘাটে যাত্রী সেবার জন্য নেই কোনো বরাদ্দ। অনেক ঘাটেই নেই যাত্রীদের ওঠা-নামার সুবিধার জন্য নির্দিষ্টভাবে আলাদা কোনো ঘাটের ব্যবস্থা।  যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য পৃথক ঘাটের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়াও বিভিন্ন ঘাটে নির্মিত যাত্রীছাউনি দখল হয়ে যাওয়াসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে বেহাল দশার। তবে বরগুনার বিভিন্ন খেয়া পারাপার হওয়া যাত্রীদের সুবিধা বাড়াতে এবং ঘাটগুলোর মান উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনা জেলা পরিষদ প্রশাসক।

বরগুনা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ১৫ টি খেয়াঘাট থেকে সরকারি ফি বাদে ইজারাদারদের নিকট থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ৯৪০ টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা এ ঘাটগুলো থেকে প্রতিদিন যাত্রী পারাপারের সংখ্যার ভিত্তিতেই বছর হিসেবে কম বেশি ইজারা নির্ধারণ করা হয়। এ বছর পুরাকাটা-আমতলী খেয়াঘাট থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে বড়ইতলা-বাইনচটকি ঘাট থেকে ১ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার, চালিতাতলী-বগী ঘাট থেকে ৮৭ লাখ ৬০ হাজার, ফুলঝুড়ি-রামনা ঘাটে ৫৬ লাখ ১২ হাজার ২৪০, নিশানবাড়িয়া-পাথরঘাটা ঘাটে ৪৯ লাখ ৮২ হাজার ৫০০, বামনা-বদনিখালী ঘাটে ৩৭ লাখ ৫৫ হাজার, গোলবুনিয়া-পচাঁকোড়ালিয়া ঘাটে ১৪ লাখ ১০ হাজার, লতাকাটা-নকরী ঘাটে ৪ লাখ ৫০ হাজার, পোটকাখালী-ফুলঝুড়ি ঘাটে ৬ লাখ, কাকচিড়া-গুলিশাখালী ঘাটে ২ লাখ ১৪ হাজার, কালমেঘা-বান্দরগাছিয়া ঘাটে ২ লাখ ১০ হাজার, বালিয়াতলী-তালতলী ঘাটে ১ লাখ, পোটকাখালী বাজার-কুমরাখালী ৩১ হাজার, অযোদ্ধা-খোলপটুয়া বাজার দক্ষিন কালিকাবাড়ি ঘাটে ৩০ হাজার এবং আয়লা-গুলিশাখালী ঘাটে ১৬ হাজার ২০০ টাকা  ইজারা আদায় করা হয়েছে।

প্রতি বছর সবমিলিয়ে বরগুনায় কয়েক কোটি টাকা ইজারা আদায় হলেও ঘাট ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ঘাটের ইজারাদার ও যাত্রীরা। এ ছাড়াও সঠিক তদারকির অভাবে বিভিন্ন ঘাটে নির্মিত যাত্রীছাউনি দখল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তারা। অপরদিকে যাত্রীছাউনি কারো দখল অথবা ভাড়া নেয়ার কোনো নিয়ম না থকলেও যাত্রীছাউনিতে সংযুক্ত টি স্টল এবং পাবলিক টয়লেট ভাড়া দেয়ার নিয়ম আছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

সরেজমিনে বরগুনার বিভিন্ন খেয়াঘাট ঘুরে দেখা যায়, ইজারা আদায়ের দিক থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আসে পুরাকাটা-আমতলীর খেয়াঘাট থেকে। তবে এই খেয়া পারাপারের জন্য আলাদা কোনো ঘাট না থাকায় ফেরির পল্টুন থেকেই ওঠা নামা করতে হয় যাত্রীদের। এতে যাত্রীদের মালামাল ও মোটরসাইকেল ওঠাতে-নামাতে গিয়ে প্রায় সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও যাত্রীদের সুবিধার্থে পুরাকাটায় নির্মিত যাত্রীছাউনিটি জেলা পরিষদের তদারকির অভাবে দখল করে তালাবদ্ধ করে বসবাস করছেন স্থানীয় এক মসজিদের মোয়াজ্জিন। একই চিত্র রাজস্ব আদায়ের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা  বরগুনার বড়ইতলা-বাইনচটকি খেয়া ঘাটেরও। ফেরিঘাটকে খেয়াঘাট হিসেবে ব্যবহার করায় একদিকে ফেরিতে বিভিন্ন গাড়ি ওঠানামা করছে অপরদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একই পথে খেয়ায় ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা। বর্ষার সময়ে নদীর পানি বেড়ে গেলে সাঁকো দিয়ে ওঠানামা করতে হয়  বড়ইতলায় যাত্রীদের। এছাড়া যাত্রীদের জন্যে নির্মিত যাত্রীছাউনিটি খেয়াঘাট থেকে একটু দূরে হওয়ায় পরিতক্ত অবস্থায় পরে থাকে। স্থানীয়রা সেটিকে ব্যবহার হচ্ছে মসজিদ হিসেবে। আর দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে আছে যাত্রীদের জন্য নির্মান করা টয়লেট। অপরদিকে বরগুনার গোলবুনিয়া-চালিতাতলী নামে  আরেকটি খেয়াঘাটেরও বেহাল দশা। গোলবুনিয়ায় নির্মিত যাত্রীছাউনিটি প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে পরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে ভাঙা অবস্থায়। ফলে ঘাটে আসা যাত্রীদের খেয়া পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় রাস্তায়, অথবা পাশে থাকা বিভিন্ন চায়ের দোকানে। এতে পুরুষ যাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় বসে সময় পার করলেও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী এবং শিশু যাত্রীরা।

বড়ইতলা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, যাত্রীদের জন্য নির্মিত যাত্রীছাউনিটি ঘাট থেকে অনেক দূরে তৈরি করা হয়েছে। এখানে যাত্রীরা বসলে কখন খেয়া ছেড়ে যাবে তা কেউ দেখতে পারেনা। একারণে দীর্ঘদিন ধরে  যাত্রীছাউনিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। পরে যাত্রীছাউনিটি এলাকাবাসী ওয়াল এবং টিনের বেড়া দিয়ে নামাজের জন্য মসজিদ তৈরি করেছেন।

একই ঘাটের ইজারাদারদের পক্ষে ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আহমেদ পারভেজ বলেন, প্রতিবছরে এ ঘাটটি কোটি টাকায় ইজারা নিতে হয়। তবে খেয়ার জন্য আলাদা কোনো ঘাট নির্মান করা হয়না। ফলে ফেরিঘাটের পল্টুনকেই খেয়ার ঘাট হিসেবে আমাদের ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে যাত্রীদের সুবিধার্থে বৃষ্টির মৌসুমে আমরা নিজেদের অর্থায়নে অস্থায়ীভাবে খেয়ার জন্য ঘাট তৈরি করে যাত্রীদের পারাপার করি। এ ছাড়াও ঘাটে আসা নারী-পুরুষ যাত্রীদের জন্য আলাদা কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। একটি যাত্রীছাউনি থাকলেও তা ঘাট থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যাত্রীদের কোনো উপকার হয়না। আমরা চাই যাত্রীদের সুবিধার্থে নারী-পুরুষদের জন্য আলাদা টয়লেট ব্যবস্থাসহ ঘাটের কাছাকাছি একটি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করে দেয়া হোক।

আমতলী ও পুরাকাটা খেয়ার নিয়মিত যাত্রীরা জানান, ফেরির পল্টুন থেকে আমাদের মোটরসাইকেল নিয়ে খেয়ায় উঠতে হয়। অনেক সময় ঘাটে থাকা ফেরির ওপর থেকেও ওঠা-নামা করতে হয় আমাদের। এতে মোটরসাইকেল স্লিপ করে নদীতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমতলী-পুরাকাটা খেয়াঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম নবীন বলেন, আমাদের খেয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন ঘাট নেই। সড়ক ও জনপদের যে ফেরির ঘাট আছে এখান থেকে যাত্রীরা খেয়ায় ওঠা-নামা করে। এ কারণে যখন ফেরিতে গাড়ি ওঠা-নামা করে তখন খেয়ার যাত্রীরাও একই পথে চলাচল করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। বর্তমানে এখানে একটি যাত্রীছাউনি থেকেও না থাকার মত অবস্থায় রয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত যাত্রীছাউনিটি পুনরায় সংস্কার করে বসার ব্যবস্থা করলে খেয়া পার হতে আসা যাত্রীদের সুবিধা হবে।

খেয়াঘাটের ভোগান্তি নিয়ে আমতলীর এক যাত্রী বলেন, আমতলী ও পুরাকাটার খেয়া পারা-পারে সাধারণ মানুষকে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর একমাত্র কারন ফেরির গাংওয়েতে খেয়াঘাট হওয়ায়। বিশেষ করে যখন ফেরি আসে তখন খুব সমস্যা হয়। বিগত দিনে খেয়ে উঠতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনার ঘটনা রয়েছে।

গোলবুনিয়া-চালিতাতলী খেয়াঘাটের ইজারাদার মোঃ আল-আমীন বলেন, প্রতিবছর আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে ঘাটের ইজারা নিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাত্রী সেবার মান এবং ঘাট উন্নয়নে তেমন কোনো কাজই করেননা। এখানে দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীছাউনিটি ভেঙে পড়ে আছে। খেয়া পার হতে আসা যাত্রীদের বসার মত কোনো জায়গা নেই। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় যাত্রীদের বসার জায়গা না থাকায় সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ সময় যাত্রীরা ঘাটের বিভিন্ন দোকানে বসেই খেয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। ফলে এ ঘাটে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। আমরা চাই যাত্রীছাউনিসহ যাত্রীদের  সুবিধার্থে ঘাটের সকল সমস্যা দ্রুত সমাধান করে দেয়া হোক।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম  বলেন, আমি ইতোমধ্যে  খেয়া ঘাটগুলোর উন্নয়নে কি কি কাজের প্রয়োজন রয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলেছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে ঘাট উন্নয়নে দ্রুত কাজ শুরু করব। এ ছাড়া যেসব খেয়াঘাটের যাত্রীছাউনি বেদখল হয়েছে সেগুলো উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Advertisement
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement
Advertisement