বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
বাস ও তিন চাকার যানের (মাহিন্দ্রা) চালকদের দ্বন্দ্ব নিরসনকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। এর প্রতিবাদে বরিশাল–কুয়াকাটা ও বরিশাল–ভোলা মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে দক্ষিণের জেলাগুলোর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আজ শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ব্যস্ত দুই মহাসড়কের দুই প্রান্তে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও চালকেরা। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এরপর বেলা দেড়টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল–কুয়াকাটা–ভোলা মহাসড়কের মোড়ে বাসের চালক ও তিন চাকার যানের চালকদের মধ্যে মহাসড়কে চলাচল নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা, উত্তেজনা ও একপর্যায়ে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল আজাদ, রবিউল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম বিষয়টি সমাধান করতে গেলে তাঁদের ওপর চড়াও হন তিন চাকার যানের চালক ও স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। এ সময় তাঁদের তিনজনকে মারধর করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তিন চাকার যানের চালক ও স্থানীয় পাঁচ থেকে সাতজন মারধরের ঘটনায় জড়িত। তিনজনকে মারধরের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টার দিকে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুই প্রান্তে আটকা পড়ে অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন। বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি সড়কেও তীব্র যানজট দেখা যায়।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা হাসান দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সকাল সাতটায় ঢাকা থেকে বাসে উঠেছি বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। এখানে এসে বেলা ১১টায় আটকা পড়েছি। একে তো পবিত্র রমজান মাস, তার ওপরে প্রচণ্ড গরম। কী যে দুর্বিষহ অবস্থা আমাদের, তা বোঝাতে পারব না।’
এদিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে ছুটে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সোনিয়া খান ও বন্দর থানা-পুলিশ। এ সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর বেলা সোয়া একটার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে সাময়িকভাবে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তানজিল আজাদ বলেন, বাস ও তিন চাকার যানের চালকদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তাঁরা সেখানে যান, যাতে মহাসড়কে তাঁরা ঝামেলা না করেন। তখন এক সহপাঠীকে মারধর করেন তিন চাকার যানের চালকেরা। পরে আরও দুজন এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, মারধরের ঘটনাটি দুঃখজনক। তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানও করা হবে।
প্রক্টর সোনিয়া খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে শুনেই আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত শুনি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’ তিনি বলেন, তাঁরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। বিচারের আশ্বাস দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।