নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আমাদের দৈনিন্দন জীবনে বাসা-বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিসীম। আলো ও বাতাস সরবরাহ, খাদ্য ও ঔষুধ তৈরি এবং সংরক্ষণ, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ আরো অনেক নিত্যদিনের কাজে ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই বিদ্যুৎ যতটা সহযোগী, পাশাপাশি ততটাই বিপদজনক। বিদ্যুৎ সতর্কতার সাথে ব্যবহার অথবা নিরাপদ সংযোগ না হলে তাতে আমাদের জীবনে ঘটে যেতে পারে বিপদজনক দুর্ঘটনা সহ মৃত্যুর আশংকা। বাংলাদেশে হরহামেশাই অনিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগের কারণে বিভিন্ন বিপদজনক ঘটনা ও মৃত্যু ঘটে। এজন্যে বৈদ্যুতিক সংযোগে উন্নতমানের তার ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ, বৈদ্যুতিক সংযোগে ব্যবহৃত উন্নতমানের তার তৈরিতে নিরাপদ ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বিআরবি ক্যাবলস। জনসাধারণের এই আস্থার দুর্বলতাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যক্তিবর্গ কোনো প্রকার বৈধতা ছাড়াই পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে গড়ে তুলেছে এক বিশাল নকল বিআরবি বৈদ্যুতিক তারের কারখানা। এই নকল তার বাজারজাত করা হচ্ছে আসল বিআরবি ক্যাবলস ব্র্যান্ডের নামে। এসব তার ব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
দৈনিক আমাদের কন্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে, গোপন ক্যামেরার ভিডিও এবং তথ্যে নকল বিআরবি তার তৈরীর কার্যক্রম ধরা পরে। এই ভিডিও-তে সুস্পষ্ট দেখা যায়, নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিআরবি ক্যাবলস ব্র্যান্ডের নকল বৈদ্যুতিক তার। সাধারণত তামা বা উচ্চমানের বিদ্যুৎ সুপরিবাহী ধাতব পদার্থ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার তৈরী করা হয়। অপরদিকে এই কারখানায় তামার পরিবর্তে বৈদ্যুতিক তার তৈরিতে লোহার চিকন গুনা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত নিম্নমানের। লোহাতে মরিচা পরে তার ভেঙ্গে যাওয়া সহ বিদ্যুৎ প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে, তাতে বিপদ জনক দূর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অপরদিকে তামাতে মরিচা পরে না ও লোহার তুলনায় নমনীয়, কপার অক্সাইড নামে একটি সবুজ রঙের প্যাটিনা তৈরি করে যা ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং বিদ্যুৎ পরিবহণে বাঁধা প্রদান করে না। তাই তামার বৈদ্যুতিক তার লোহার তারের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বিপরীত পাশে ১০০ গজের মধ্যে গড়ে ওঠা এই বিশাল নকল তার তৈরির কারখানার মালিকদের নাম মানিক, খোকন, নওশের সহ বেশ কয়েকজন অংশীদার। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের বেলায় বন্ধ রেখে সারা রাত চলে বিআরবি ক্যাবলস ব্র্যান্ডের সহ আরো নানা নামিদামি ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক নকল তার তৈরির কার্যক্রম। এই ধরনের নকল তারের কারনে গত কয়েক বছর আগে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে তাজরীন গার্মেন্টসে ২০০ জন শ্রমিক এর প্রাণহানি ঘটে। মাঝেমধ্যে মোবাইল কোর্টের অভিযানে এইসব অবৈধ ও নকল তার তৈরির অসাদু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা করা হয়। এই ধরনের সংঘবদ্ধ চক্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কে ম্যানেজ করে পুনরায় আবারও একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় দেশের নামিদামি ব্রান্ডের নকল তার উৎপাদন করে এবং বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা এ ধরনের তার কিনে তাদের বাসা-বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।