মধ্যরাতে মাটিভর্তি ট্রাক্টরসহ ভূমিদস্যুদের আটকে থানায় দিলো শিক্ষার্থীরা

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ দিয়েও অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে ফসলী জমি কাটা বন্ধ না হওয়ায় মধ্যরাতে পথরোধ করে ট্রাক্টরসহ ভূমিদস্যুদেরকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। তবে দায়ী দুই ব্যক্তিরা আটক হলেও পরে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) দিবাগত মধ্যরাতে সদর উপজেলার নয়াগোলা পুলিশ লাইনস এলাকায় মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলে বাধা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে ৯টি মাটিভর্তি ট্রাক্টরসহ ফসলী জমি কেটে পুকুর ভরাটের অভিযোগে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মাটির্ভতি ট্রাক্টরগুলো সদর পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হলেও ছেড়ে দেয়া হয় ভূমিদস্যু রেজাউল করিম ও আব্দুস সালামকে। এনিয়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নেয়া হয়নি কোন আইনানুগ ব্যবস্থা।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রাহিম বলেন, গত অনেকদিন ধরেই সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সল্লা এলাকায় ফসলী জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করছে ভূমিদস্যুরা। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ দিলেও তা বন্ধ না হওয়ায় আমরা কয়েকজন মিলে সড়কে চলাচল করা এসব ট্রাক্টর আটক করে পুলিশকে দেয়। পরবর্তীতে মাটিভর্তি ট্রাক্টরসহ দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

মাটিভর্তি গাড়িগুলো আটক করা হলেও খালি গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়া হয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর শুনেছি, আর মাটি কাটা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতিতে আটককৃত দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে গাড়িগুলোকে আটক করে রাখা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে একজন ব্যক্তি আব্দুস সামাদ মাটিগুলো কিনছিল বলে জানা যায়।

জানা যায়, একই স্থানে গত ২৩ ডিসেম্বর ফসলী জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগ কাটা ও পুকুর ভরাটের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জমিমানা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আঞ্জুমান সুলতানা। অভিযোগ রয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গেলে ভূমিদস্যু রেজাউল করিম এসিল্যান্ডের সাথে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পাশাপাশি নানারকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আঞ্জুমান সুলতানা।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট করতে গিয়ে আমরা যাতে সেখানে যেতে না পারি, তাই নানারকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। তবে তাদের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের পরেও নিয়ম অনুযায়ী অবৈধভাবে মাটি কাটার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তবে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে গাড়ি আটকের বিষয়টি জানেন না বলে জানান আঞ্জুমান সুলতানা।

স্কুলশিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, জেলা শহরের খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ভূতপুকুর। আশেপাশের সকল খাল-ডোবা ভরাট হয়ে ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। তবে ভূতপুকুরটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে পানি ধরে রাখতে দেখছি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সেই বিশাল পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে বালুগ্রাম এলাকার ফসলী জমি কেটে আনা মাটি দিয়ে। জেলা শহরে সারারাত ধরে তারা এমন ভরাটের কাজ করলেও প্রশাসনের কোন তদারকি বা ব্যবস্থা নেয়া নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।

জানা যায়, গত প্রায় এক মাস ধরে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের সল্লা এলাকায় ফসলী জমির টপ সয়েল বা মাটি কাটছে মাটিখেকোরা। সন্ধ্যা নামলেই এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেলা শহরের ভূতপুকুর এলাকায় থাকা সেই বিশাল পুকুর ভরাট করতে। ২৫-৩০ টি ট্রাক্টরে করে এসব মাটি পরিবহন করতে গিয়ে নষ্ট করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং এলজিইডির পিচঢালা রাস্তা। এছাড়াও সড়কের উপর পড়ে থাকা মাটিতে শীত ও বৃষ্টি পড়ে তৈরি হয় কাদা। ফলে যানবাহন চলাচলেও দেখা দেয় সমস্যা। হরহামেশায় ঘটে সড়ক দূর্ঘটনা। ধুলাবালির জ্বালায় অতিষ্ঠ সড়কের পাশে থাকা বাসিন্দা ও দোকানদাররা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গায় ফসলী জমি কাটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন রেজাউল করিম নামের এক ভূমিদস্যু। এই মাটি নিয়ে এসে পুকুর ভরাট করেন আরেক ভূমিদস্যু আব্দুস সালাম। এনিয়ে ভূমিদস্যু রেজাউল করিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পুকুর ভরাটের মূলহোতা আটক হওয়া আব্দুস সালাম বলেন, ভরাট হওয়া জায়গায় আমরা প্লট তৈরি করব। মূলত মাটিগুলো দিচ্ছে রেজাউল করিম। তাকে আটকের পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে যায়। পরে মাটিকাটার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা জানান, প্রকাশ‍্যে এসব ফসলি জমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল। ফসলি জমির মাটি কেটে ভরাট করছে পুকুর, ডোবা-নালাসহ বিভিন্ন জলাশয়। এভাবেই তিন ফসলি জমির বুক চিরে ছুটে চলছে মাটি ভরাট করা ট্রাক্টর। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন ফসলী জমিতে এখন চলছে মাটিকাটার মহাৎসব। তিন ফসলি কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পতিত ভূমিতে। এতে দিন দিন ফসলের উৎপাদন কমছে, বেকার হচ্ছে কৃষক, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত।

১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। পুনরায় কাজটি করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা আর ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এদিকে, আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রইস উদ্দীন জানান, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। গাড়িগুলো জব্দ করে সদর পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। প্রশাসন এবিষয়ে মোবাইল কোর্ট বা জরিমানা করবে।

পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে মাটিভর্তি গাড়িগুলো সদর পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। কাউকে আটকের পর তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ইউএনও ভালো বলতে পারবেন। এবিষয়ে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। শিক্ষার্থীরা গাড়িগুলো আটক করেছে। ডিসি-ইউএনও মহোদয় বিষয়টি জানেন।

এনিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, কাউকে আটকের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীরা যখন গাড়িগুলো আটক করে তখন যেহেতু আমরা উপস্থিত ছিলাম না, সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট হওয়ারও সুযোগ নেই। তবে উভয় পক্ষ এসে দোষ স্বীকার করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

 

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement
Advertisement