ফেনীতে মাদককারবারিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মামলার বাদী ইউপি সদস্য রহিম উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল এই স্মারকলিপি তুলে দেন।
এ সময় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।
স্মারকলিপিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, একজন আত্মস্বীকৃত মাদককারবারির মিথ্যা মামলা নিঃসন্দেহে মুক্ত গণমাধ্যমের ওপর চরম আঘাত। সেই মাদককারবারি রহিম উল্যাহ ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। এমন ব্যক্তির জনপ্রতিনিধিত্ব ওই জনপদের জন্য বড় হুমকি। এর আগেও দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি মো. ওমর ফারুকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তাকে একদল সন্ত্রাসী মারাত্মকভাবে আহত করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও প্রধান আসামি এখনো প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আত্মস্বীকৃত মাদককারবারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ এবং দৈনিক ফেনীর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে আপনার ভূমিকা কামনা করছি। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর মামলা-হামলার এমন আঘাতে ফেনীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
এ সময় জেলা প্রশাসক অভিযুক্তকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। এর আগে গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ঘটনা অবহিত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশ সুপার সেই আত্মস্বীকৃত মাদককারবারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন।
এর আগে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) ইউপি সদস্য রহিম উল্ল্যাহ বাদী হয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তারেক চৌধুরীকে এক নম্বর আসামি করে ফেনী আদালতে এ মামলা করেন। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী। এ ছাড়া মামলায় দৈনিক ফেনীর রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে মামুনুর রহমানকে, ঢাকা পোস্টের রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে জামশেদ আলম অনিক ও ওমর ফারুক নামে দুজনকে—বাস্তবে এদের কেউ এজাহারে উল্লেখিত পদে নেই।
মামলার এজাহারে নিজেকে জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ইউপি সদস্য উল্লেখ করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাদককারবারি রহিম উল্ল্যাহ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ‘সীমান্তে চোরাচালানের সাম্রাজ্যে ইউপি সদস্য, বললেন পেশাই এটি’ শিরোনামে মাদক কারবার, চোরাচালান ও মানবপাচার চক্র নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট ও স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ফেনী। এতে মাদককারবারি হিসেবে ফুলগাজী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহসহ বেশ কয়েকজনের নাম ওঠে আসে।