রফিকুল ইসলামঃ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ন্যায়ভিত্তিক, সুসংহত ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অপরিহার্য। আর এ নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের তৃণমূল প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এ বাহিনী নিরাপদ সমাজ কাঠামো গঠন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখছে।
উপদেষ্টা বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারী সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জাতীয় সমাবেশ ২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
উপদেষ্টা বলেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, এ বাহিনীর ৩৯ টি পুরুষ আনসার ব্যাটালিয়ন, ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন, একটি বিশেষায়িত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সহ মোট ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ নির্ভরশীল সহায়ক শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। সামাজিক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক বন্ধন দৃঢ়কল্পে শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একীভূত হয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব আস্থার সাথে পালন করে যাচ্ছে এ বাহিনীর সদস্যরা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ভূমিদস্যু প্রতিরোধ, ভেজাল বিরোধী অভিযান ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় উপজেলা প্রশাসনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতন্দ্র প্রহরী সদস্যরা। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে দেশের কূটনৈতিক মিশনসমূহে নিরাপত্তা প্রদানে এ বাহিনীর ভূমিকা দৃশ্যমান। এই বাহিনীর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি)-এর সদস্যরা কেপিআইসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগে আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যরা মানবতার সেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
উপদেষ্টা আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি তরুণ সমাজকে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান ও সামাজিক ব্যবসার আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের সর্ববৃহৎ এই বাহিনীর প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাহিনীর গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণকে আধুনিক সিলেবাস ও যুগোপযোগী নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে, যেখানে সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবক অঙ্গ সংগঠন ভিডিপির ডাটাবেজের ডিজিটালাইজেশন ও নতুন অবকাঠামোর সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে দেশসেবার মৌলিক চেতনায় নবাগত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনাও এ বাহিনীর বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি এসময় দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন উদ্যমে দেশ সেবায় নিয়োজিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সমাবেশ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৮ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাদের মাঝে কৃতিত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এ বছর সেবা ও সাহসিকতার ৪টি বিভাগে মোট ৮টি ক্যাটাগরিতে কর্মকর্তা, কর্মচারী, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাসহ সর্বমোট ১৫৬ জন পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পরে উপদেষ্টা আনসার একাডেমি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন, ফটোসেশনে অংশ নেন ও কুটিরশিল্প প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।