মোহাঃ আলী আশরাফ খোকন:
ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে সব সময় প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরণগঞ্জ-চৌকা সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে করছেন সমন্বয় সভা। ভারত যেন বাংলাদেশের ইঞ্চি মাটি ও দখন নিতে পারে সে আলোচনাই এখন সীমান্ত এলাকার চায়ের দোকানে দোকানে।
মঙ্গলবার(২১ জানুয়ারি) সকালে সীমান্ত এলাকার বাখোর আলী বাজারে গিয়ে এমন চিত্রই চোখে পড়ে “দৈনিক আমাদের কন্ঠের” প্রতিবেদকের কাছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খেতে এসেছেন কামরুল ইসলাম। তিনি “দৈনিক আমাদের কন্ঠকে” বলেন, বিগত দিনে ভারত আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছে। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর। তারা আমাদের উপর নির্যাতন আরো বাড়িয়েছেন। তবে আর আমরা সহ্য করবনা। সময় এসেছে জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করার। আমরা গ্রামবাসী সব সময় প্রস্তুত।
আনারুল ইসলাম নামে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ভারত বাংলাদেশ দখল করে নিতে চাই। কিন্তু তারা জানেনা বাঙ্গালী জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করতে জানে। আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। দেশের এক টুকরো অংশও ভারতকে দখল করতে দিব না। এসব নিয়েই সকাল বিকাল আমাদের চায়ের দোকানে আলোচনা হচ্ছে।
আলি হাসান নামে এক যুবক বলেন, দেশের স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট সরকার ভারতে পালিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র করছে। আমরা তা রুখে দিতে প্রস্তুত আছি। সীমান্ত এলাকার মানুষ যা প্রমাণ দিয়েছেন। অনেক আহত হয়েছেন তাতে আমাদের দু:খ নেই। আমরা সীমান্ত এলাকার মানুষ। সবাই একত্রিত হয়ে দেশের জন্য জীবন দিব।
সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। কৃষকদের মাঠে যেতে কোনো সমস্যা নেই। তারা খেতে যাচ্ছেন এবং কৃষিকাজ করছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কেউ সীমান্ত এলাকায় যাবেন না এবং কৃষক ও স্থানীয় জন সাধারণ এর ফসলের মাঠ নষ্ট না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে ‘নো মানস ল্যান্ডে ভারতীয়দের আগ্রাসন রেখে দেয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরাজিত হয়নি এলাকাবাসী।
নাগরিকদের মধ্যে টানা তিন ঘণ্টা সংঘর্ষের পর বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভারতের উস্কানিতে পা না দিয়ে দিয়ে সচেতন হয়ে বিজিবির সঙ্গে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সন্ধ্যার পরে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন চায়ের দোকানে এমন আলোচনা করছেন তারা।
এদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেছেন ৫৯ বিজিবির লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
৫৯ বিজিবি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, সীমান্ত এলাকার মানুষ অনেক ভাবেই আমাদের সহায়তা করে আসছেন। আগামীতেও সীমান্তবাসীর এই সহায়তা সীমান্ত বলেও নিশ্চিত করেছেন।
এখন সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কৃষকরা তাদের জমিতে কাজ করছেন। পহারা দিচ্ছে বিজিবি। তবে সীমান্তের শূন্য লাইনে সাধারণ মানুষকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ ইতিমধ্যেই সীমান্তে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে অনেক কৃষকের ফসল নষ্ট করেছেন।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে ভারতীয় ৫০০-৬০০ নাগরিক বাংলাদেশী নাগরিকদের আম গাছের ডাল কেটে দেয়। এতে বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুপুর ১২ থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষ। এসময় ভারত সীমান্তের নাগরিকরা উত্তেজিত হয়ে বাংলাদেশের বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে হাতবোমা ,ককটেল ও তীর ধুনুক নিক্ষেপসহ বিভিন্নভাবে হামলা করে। এতে একজন বিজিবি সদস্য ও ২৫-৩০ জন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন।
গত ৬ জানুয়ারি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা বিওপির পিলার নম্বর ১৭৭-এর ১ এস, ২ এস ও ৩ এস এলাকায় কাঁটাতারে বেড়া নির্মাণ শুরু করেন বিএসএফ পরে বিজিবির বাঁধায় তা পণ্ড হয়ে যায়।